ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মানসিক চাপে বিপর্যস্ত মিন্নি

রুদ্র রুহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানসিক চাপে বিপর্যস্ত মিন্নি

রুদ্র রুহান, বরগুনা : আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ভালো নেই। তীব্র মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। বিষন্ন মিন্নি কারো সাথে তেমন কথাও বলছেন না। মাঝে মাঝেই অস্বাভাবিক আচরণ করছেন।

আচরণের খেই না পেয়ে মেয়েকে চিকিৎসা করানোর কথা ভাবছেন বাবা-মা।  মামলার আসন্ন তারিখের পরপরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল অথবা ঢাকা নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

গত তিন সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে দেড়মাসেরও বেশি সময় আটক থাকার পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন মিন্নি । তার পর থেকেই তিনি বিষন্নতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

বৃহষ্পতিবার বিকেলে বরগুনা পৌরশহরের নায়াকাটা মাইঠা এলাকায় মিন্নির বাড়িতে যান রাইজিংবিডির প্রতিবেদক। মিন্নির স্বজনদের সাথে কথা বলেন তিনি।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত। বাড়িতে আসার পর এক বেলাও ঠিকমত খায়নি। একটি রাতও সে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। খেতে বসলেই কান্না করে, খাবার ফেলে উঠে গিয়ে বমি করে। বিশেষ করে রিফাতের স্মৃতি তাড়িত হয়ে মানসিকভাবে সে বেশ অসুস্থ। ’

তিনি বলেন, ‘রিফাত চিংড়িমাছ পছন্দ করতে বলে আমি দেড়কেজি চিংড়ি কিনে ফ্রিজে রেখেছিলাম। গতকাল ওই চিংড়ি রান্না করেছিল ওর মা। খাবার টেবিলে পরিবেশন করতেই মিন্নি কান্না শুরু করে। না খেয়েই উঠে যায়। কিছুতেই তাকে সে মাছ খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। আত্মীয় স্বজনদের সাথেও কোনো কথা বলে না। কেউ এসে কুশল জানতে চাইলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। চুপচাপ বসে থাকে সারক্ষণ। মাঝে মাঝে একা কান্নাকাটি করে।’

কিশোর বলেন, ‘ভাই-বোনদের সাথে ও অনেক দুষ্টুমি করত। কিন্ত এখন সে অচঞ্চল, নিথর নিস্তব্ধ। আমি সবসময় ওর সাথে কথা বলতে চেষ্টা করি। কি খেতে ইচ্ছে করে জানতে চাই, কিন্ত সে নিরুত্তর। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার তারিখ রয়েছে। হাজিরার পর মিন্নিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল নিয়ে যাব। বরিশালে সুচিকিৎসা না হলে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাই মেয়ের। ’

মিন্নির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স মাত্র ১৯ বছর। এই বয়সে ওর চোখের সামনে স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার আকষ্মিকতায় হতবিহ্বল ছিল মিন্নি। এরপর যা ঘটেছে তা সবাই জানেন। আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখেছে রিফাতকে বাঁচাতে। অথচ, সেই হত্যা মামলায় মিন্নিকে স্বাক্ষী থেকে কৌশলে আসামি করে রিমান্ড নেয়া হয়েছে। জেল হাজতে বাস করতে হয়েছে তাকে। সর্বশেষ চার্জশিটেও তাকে আসামি করা হয়েছে। কার স্বার্থে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে, কারা নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে দেশবাসী সব জেনেছে। অথচ, আমার মেয়েকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমার মেয়ে স্বাভাবিক হতে পারছে না। আমি রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করি। আমি এখনো এই মামলাটির ভিন্ন কোনো তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে পুনঃ তদন্তের দাবি জানাই। আমার মেয়ে যদি সে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয় তবে তা মেনে নেব।’

মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি বলেন, ‘ঘুমুতে গেলে মেয়েটি শুধু এপাশ ওপাশ করে। ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে বসে। জড়সড় হয়ে বসে কাঁপতে থাকে। বিছানায় বসে থাকে চুপচাপ। মিন্নির শরীর একদমই ভালো নেই। হাঁটুতে ব্যাথা ওর। দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে আমার মেয়েটা।’

আবেগী কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘রিফাতের জামা-কাপড়, আসবাবপত্র দেখলেই কান্না করতে থাকে। আমি যথাসম্ভব রিফাতের স্মৃতি ওর চোখের আড়াল করে রেখেছি। এ অবস্থায় আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারব কিনা জানিনা। ’এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মিন্নির মা জিনাত জাহান।

মিন্নির বাবা-মায়ের সাথে কথা হলেও কথা বলতে রাজি করা গেল না মিন্নিকে। সাংবাদিক এসছে শুনে সামনেই আসেননি তিনি। তার বাবা কিশোর জানালেন, সাংবাদিক বা পুলিশ দেখলেই ভয় তাড়িত হয়ে উঠছে মিন্নি।

এদিকে এ বিষয়ে কথা হয় মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘মিন্নির চিকিৎসা খুব জরুরী। আইনগত কোনো বাধ্য বাধকতা আছে কিনা সে ব্যাপারে জেডআই খান পান্না স্যারের সাথে পরামর্শ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসায় কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। আগামী ১৮ তারিখ হাজিরা শেষে ওর চিকিৎসার ব্যপারে আমরা পদক্ষেপ নেব। ’

বরগুনার সিভিল সার্জন ডাক্তার হুমায়ুন খান শাহীন মিন্নির চিকিৎসা বিষয়ে বলেন, ‘মিন্নি সদ্য কৈশোর পার হয়ে আসা একটি মেয়ে। ওর জীবনে যা ঘটেছে এতে প্রচুর মানসিক চাপ থাকা স্বাভাবিক। বিশেষ করে চোখের সামনে এরকম নির্মমতা এই বয়সে দেখা, এটা সত্যি ওর জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার মতে ওর কাউন্সেলিংয়ের জন্য সবসময়ই একজনকে রাখা উচিত। পাশাপাশি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরী।’

 

রাইজিংবিডি/বরগুনা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯/রুদ্র রুহান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়