ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জনশূন‌্য জয়নাল হাজারীর সেই ‘শৈল কুটির’!

সৌরভ পাটোয়ারী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনশূন‌্য জয়নাল হাজারীর সেই ‘শৈল কুটির’!

ফেনীর মাস্টার পাড়ার ‘শৈল কুটির। এক সময় ফেনীর সব চাঞ্চল্য ছিল ৩ তলা বিশিষ্ট বিশাল এ বাড়িটি ঘিরে। এখন বাড়িটি জনমানব শূন্য নিরবে দাঁড়িয়ে আছে।

দেড়যুগ ধরে পরিত্যক্ত জনশূন্য ‘শৈল কুটির’ এর দালান ঘর! যাকে ঘিরে ছিল এ কুটিরের সব চাঞ্চল্য, ফেনীর এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিক জয়নাল হাজারী নিজেও ফিরেননি তার এই আপন ঠিকানায়।

স্থানীয়রা জানান, জয়নাল হাজারীর এ বাড়িটি প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা জুড়ে। বাড়িটি জয়নাল হাজারীর বাবা গণি হাজারী থেকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। অবশ্য বাড়িটির দাবিদার ছিলেন গণি হাজারীর সমসাময়িক তৎকালীন ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা: এছহাক চৌধুরীও। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালে এছহাক চৌধুরী ভারত চলে যান। যুদ্ধ শেষে ফিরে এলেও এ বাড়িতে আর ওঠা হয়নি তার।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, বাড়িটি নিয়ে বিরোধ চলছিল প্রায় একযুগ। পরে জয়নাল হাজারী বাড়িটিকে মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিব উদ্যানের নামে দান করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু কাগজপত্র জটিলতার কারনে দান করা যায়নি। জয়নাল হাজারী এ বাড়িতে বসেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ যাবতীয় কার্যকলাপ চালাতেন। ফলে বাড়িটি হয়ে ওঠে ফেনীর সব কিছুরই কেন্দ্রবিন্দু।

ব্যাক্তিগত প্রভাবের কারণে জয়নাল হাজারী ফেনী-২ আসন থেকে ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফেনীর আলোচিত টাইগার বাহিনী ছিল তারই হাতে গড়া। ১৯৯৩ সালে টাইগার বাহিনীর বিপরীতে গঠন করেন ‘স্টিয়ারিং কমিটি’। পরে ১৯৯৬ সালে তার নাম পরিবর্তন করে ‘ক্লাস কমিটি’ রাখেন। ফেনী জেলার ৪৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্লাস কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য ছিল প্রায় ১৫ হাজার। এই ক্লাস কমিটি নিয়েই তিনি বিতর্কে পড়েন।

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জয়নাল হাজারী এলাকা ছাড়েন। এরপর বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে ফেনীতে আর ফেরা হয়নি তার। চলে যান দেশের বাইরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে দেশে ফেরেন। তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন জেলও খাটতে হয়। এরপর তিনি একেবারেই ফেনী বিমুখ হয়ে যান।

‘শৈল কুটির’! এক সময় যে বাড়িকে ঘিরে ছিল বিশাল কর্মযজ্ঞ। যেখানে মানুষের দলে দলে আসা-যাওয়া। যার মধ্যমণি ছিলেন জয়নাল হাজারী। সে বাড়িতে এখন আর কেউ থাকেন না। বর্তমানে তিনি থাকেন ঢাকায়। ফলে আলোচিত এ বাড়ির এখন আর নেই সেই পুরোনো জৌলুস। হয় না কোন পরিচর্যাও।

বাড়ির বারান্দায় পড়ে থাকা আসবাবপত্রগুলোতেও সেই ছাপ। দেয়ালের ইটে শ্যাওলা ধরেছে, অযত্নে পড়ে আছে দামী ভাস্কর্যগুলোও। ঘর জড়িয়ে আছে লতা-পাতা আর শিকড়ে । লতা গুলোর আচ্ছাদনে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ভূতুড়ে পরিবেশ।

নিরাপত্তার অজুহাতে জয়নাল হাজারী দীর্ঘদিন আসেন না ফেনীতে। মাঝে মধ্যে এলেও তার আসা-যাওয়া হয় নিরবে-নিভৃতে।


ফেনী/সৌরভ পাটোয়ারী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়