ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খনন শেষ না হতেই দখল ভৈরব নদ!

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খনন শেষ না হতেই দখল ভৈরব নদ!

যশোরের চৌগাছায় খনন কাজ শেষ না হতেই দখল হয়ে গেছে ভৈরব নদ। সেখানে মাছ চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন বর্তমান ও প্রাক্তন দুই ইউপি সদস্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই ইউপি সদস্য ভৈরব নদের চৌগাছা অংশের হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর পানিগ্রাম রিসোর্ট কালভার্ট থেকে বুড়িবটতলা কালভার্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারে পানিতে ও দুই পাড়ে আগাছানাশক দিয়ে শ্যাওলা, কচুরিপানা ও ঘাস পুড়িয়ে দিয়েছেন। এবার চুন দিয়ে পানি পরিস্কার করে দুই কালভার্টে নেটের ঘেরা দিয়ে মাছ ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব নদ খননের কাজ চলছে। চৌগাছা অংশে খননের কাজ শেষ হলেও যশোর সদর, অভয়নগরসহ অন্য অংশের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে নদের চৌগাছা অংশে সরকারিভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র মতে, নদের উপর চৌগাছা অংশে অপরিকল্পিত ১৬টি কালভার্ট থাকায় নদে এখনো স্বাভাবিক পানি প্রবাহ শুরু হয়নি। এই সুযোগে চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের ৫নং (তাহেরপুর-তজবীজপুর) ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন টাইগার ও প্রাক্তন ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন নদ দখলে নিয়ে মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।

শুক্রবার তারা গ্রামবাসীদের নিয়ে সভা করেছেন। সভায় নদ দখল করে মাছ চাষের আহবান জানালেও অধিকাংশ গ্রামবাসী এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীর বিরোধিতার মুখে তারা জানান, নদে মাছ চাষ করে যে লাভ হবে তার একাংশ দিয়ে গ্রামের দুটি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন দেয়া হবে।

তারা গ্রামবাসীকে এও বলেছেন ‘উপজেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। নদে মাছ চাষ করলে কেউ বাধা দেবে না।’ প্রভাবশালী হওয়ায় ওই দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না গ্রামের লোকজন।

অবশ্য ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন টাইগার নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি নিজে নয় গ্রামের কিছু যুবক নদে মাছ চাষ করতে চান।

সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এলাকার কিছু যুবক ভৈরব নদের খনন করা তাহেরপুর রিসোর্ট সেতু থেকে বুড়ি বটতলা কালভার্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার অংশে মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। তারা নদের ওই অংশে দুই পাড়ে আগাছানাশক দিয়ে ঘাস মেরেছেন। তাহেরপুর-তজবীজপুর গ্রামে দুটি মসজিদ আছে। মাছ চাষের আয় থেকে টাকা দিয়ে দুই মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন দিতে চান। আমার কাছে তারা এসেছিলেন। আমি তাদের বলেছি এ ব্যাপারে গ্রামবাসীর মতামত নিতে হবে। সে অনুযায়ী গত ৪ অক্টোবর গ্রামবাসীদের নিয়ে মিটিং করা হয়। তাদের ৭৫ শতাংশ লোক মাছ চাষের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে ২৫ শতাংশ লোক ভৈরব নদে মাছ চাষের বিপক্ষে। এই জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। আমরা বলেছি নদ যেভাবে ওপেন আছে সেভাবে থাক।’

হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটা হলে অবশ্যই অপরাধ। খোঁজ খবর নিয়ে উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ নদের জায়গা দখল করে রাখতে পারবে না। অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। নদের পানি ও মাছ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘অপরাধীরা সবসময়ই মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে।’ গ্রামবাসীকে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহবান জানান।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘নদ দখলের বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কোনভাবেই নদ দখল করতে দেয়া হবে না।’

 

যশোর/ সাকিরুল কবীর রিটন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়