ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আকাশকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া

শামীম কাদির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আকাশকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া

দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার আতিকুলের। ভ‌্যান চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে পরিবারের সবার মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেন। তারপরও তিনি দিন বদলের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন বড় ছেলে আকাশকে নিয়ে। তবে সে স্বপ্ন এখন ধুলিসাৎ। কারণ আকাশ এখন হত‌্যা মামলার আসামি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ১৩ নম্বর আসামি মো. আকাশ। তার বাড়ি জয়পুরহাটে। সদর উপজেলার দোগাছী-দরগাতলা গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আতিকুল ইসলামের ছেলে আকাশ। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি।

হত‌্যা মামলার আসামি হয়ে আকাশ এখন কারাগারে। আর এ খবর শোনার পর থেকে তার পরিবারে চলছে মাতম। ‍বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অসহায় মা-বাবা। এলাকার বিশিষ্ট মানুষের কাছে ছুটছেন। যদি ছেলেকে কোনো রকমে রক্ষা করা যায়, সেই আশায়।

তিন ভাই বোনের মধ‌্যে আকাশ বড়। আকাশের ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও একমাত্র বোন নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

গ্রামবাসীর সহায়তায় আকাশ পড়াশোনা করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে স্থানীয় দোগাছি-দরগাতলা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৬ জয়পুরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। দুটোতেই পান জিপিএ ৫। এরপর বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভর্তি হন বুয়েটে।

 

                                                       আকাশের মা

আকাশ এমন কাজ করতে পারে তা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না গ্রামবাসী। প্রতিবেশী বাহারউদ্দিন, হাবিল হোসেন, আলম হোসেন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিনসহ আরো অনেকের বিশ্বাস আকাশ নির্দোষ।

তারা বলছেন, ‘বাবার কষ্টার্জিত অর্থ আর এলাকাবাসীর সাহায‌্যে স্বপ্ন পূরণের এতগুলো ধাপ পেরুনো আকাশ এমন কাজ করতেই পারে না। এটা অবিশ্বাস‌্য।’

আকাশের এক সময়ের সহপাঠী মেহেদী হাসান ও নোমান। তারা বলেন, ‘এলাকায় থাকাকালে তার সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। রাতারাতি কেউ নষ্ট হতে পারে না। আবরার হত‌্যার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলে আকাশ মুক্তি পেতে পারে।’

আকাশের মা জানান, আকাশকে বুয়েটে ভর্তির টাকা দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামসহ এলাকাবাসী। তাই সন্তান তার শুধু একার না, এলাকাবাসীরও।

নিজেকে আবরারের মা মনে করে তিনি বলেন, ‘আমিও আবরার হত‌্যার বিচার চাই। তবে এ হত‌্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আর এতে যেন আমার সন্তান নির্দোষ প্রমাণিত হয়। আমি আমার সন্তানকে অক্ষত ও কলঙ্কের দাগমুক্ত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।’

আকাশের স্কুল শিক্ষক আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরও একই বক্তব্য।

দোগাছি-দরগাতলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন ও দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামসহ এলাকাবাসী জানান, স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত আকাশ কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। কোনো অরাজকতায় জড়িত থাকলে মেধাবীর তালিকায় তার নাম থাকত না। তবে বুয়েটে পড়ার সময় আকাশ কী করেছে, কাদের সঙ্গে চলাফেরা করেছে তারা তা বলতে পারেন না।


জয়পুরহাট/শামীম/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়