ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রংপুরেও ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রংপুরেও ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং!

রংপুর নগরীর এ সময়ের বিপদ কিশোর অপরাধী। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা ও বস্তিতে গড়ে উঠেছে ৩০টিরও বেশি কিশোর অপরাধী চক্র।

এই চক্রের বড় একটি অংশ মাদক নেশায় জড়িত। মাদকের নেশার কারণে এরা চুরি ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।

রংপুরের এসব কিশোর গ্যাংদের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও তাতে ভরসা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আরো বোশ তৎপরতা দেখতে চান নগরীর ভূক্তভোগী বাসিন্দারা।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাদকের নেশার টাকা জোগাড়ে প্রথমে ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর। পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া এই কিশোরদের স্কুল-কলেজের মোড়ে দলবেঁধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতেও দেখা যায়। এরা নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি-দোকানে চুরি, রাস্তায় ছিনতাইয়ের মত অপরাধ করছে নির্দ্বিধায়। এদের খপ্পরে পড়া অধিকাংশ মানুষই ঝামেলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোন অভিযোগ করেন না।

সূত্র মতে, নগরীর লালবাগ, আসরতপুর, মাহিগঞ্জ, জুম্মাপাড়া, হনুমানতলা, মিস্ত্রীপাড়া, ধাপসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব অপরাধিদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান। এদের অনেকেই স্কুলের বারান্দায় পা রাখেনি। পাড়ার বখাটেদের সাথে মিশে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, নগরীতে বেশ কয়েকটি বড় বস্তি রয়েছে। কিশোর অপরাধিদের বেশির ভাগই বস্তির ছেলে। এদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মাদকাসক্ত। মাদকের নেশায় এরা প্রথমে বাসাবাড়িতে ছিচকে চুরি দিয়ে অপারাধের জগতে পা বাড়ায়। পরবর্তিতে এরা রাস্তা ঘাটে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। এদের খপ্পরে যারা পড়েন তারা ঝামেলার ভয়ে পুলিশের কাছে যাননা। ফলে অপরাধি এই কিশোরদের সাহস আরো বেড়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাদকাসক্ত এইসব কিশোররা রাতের আঁধারে বাড়ির গ্রিল কিংবা দোকানের সাটার খুলে চুরি করছে। ছোটখাট চুরি হওয়ায় অনেকেই ঝামেলা মনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দারস্থ হয়না । একই অবস্থা ছিনতাইয়ের বেলা। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে এদের অপরাধের কোন পরিসংখ্যান নেই আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে। এরা রাস্তার পাশে কিংবা অফিস পাড়ায় মটর সাইকেল চোরদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি নগরীতে এক ডাক্তারের বাসায় স্বর্ণালংকারসহ সাড়ে ৮ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। উক্ত ডাক্তার থানায় মামলা করায় বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষীকে আটক করা হয়। দু’সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার কিংবা অপরাধিকে ধরতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এটিও কিশোর গ্যাংয়েরই কাজ।

র‌্যাব-১৩ এর রংপুরের সিপিসি কোম্পানি কমান্ডার মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে দেয়া হয়েছে। রংপুর নগরীর কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা দমনে  র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  অপরাধীদের অধিকাংশই বস্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি এসবি) শামিমা পারভিন জানান, কিশোর অপরাধ দমনে আমরা সচেনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। যে কোন অভিযোগে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।  এছাড়া কিশোর অপরাধ দমনে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও মনিটরিং করছি। কিশোর অপরাধসহ যে কোন অপরাধে  পুলিশি সহায়তা পেতে ০১৭৬৯৬৯৫৪০০ যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, ‘কিশোরদের অপরাধ বন্ধে প্রথমে অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অভিভাবকদের কড়া নজরদারি সন্তানদের বিপথে চলা থেকে রোধ করতে পারে। সন্তান কি করে কোথায় যায় এ বিষয়ে অভিভাবকের কঠোর মনিটরিং দরকার। পাশাপাশি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও কিশোর অপরাধীদের কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পারে।’


রংপুর/নজরুল মৃধা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়