ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জনগণের সেবায় অফিস ছেড়ে গাছতলায় ওসি

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনগণের সেবায় অফিস ছেড়ে গাছতলায় ওসি

সাধারণ মানুষের মন থেকে পুলিশভীতি দূর করতে অফিস কক্ষ ছেড়ে থানা চত্ত্বরের গাছতলায় বসে কাজ করছেন ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি আশিকুর রহমান।

শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, থানা চত্ত্বরের কাঁঠাল গাছতলায় ‘জনগণের দরবার’ নামে সাইনবোর্ড টাঙানো। সাইনবোর্ডের সামনে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছেন ওসি আশিকুর রহমান।

আর ওসির আশপাশে চেয়ারে বসে অথবা দাঁড়িয়ে অনেক মানুষ ভিড় করছেন। তারা এসেছেন নানা সমস্যা নিয়ে। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনে ওসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ আশিকুর রহমান। তার বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়।

অপরাধ নির্মূলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পুলিশ বিভাগ থেকে পুরষ্কারও পেয়েছেন।

সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রাম থেকে থানায় অভিযোগ নিয়ে আসা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘স্বামীর বাড়ির লোকজন বিনা কারণে আমার উপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছিল। এই অভিযোগ দিতে থানায় এসেছি। এসে দেখি ওসি থানা চত্ত্বরের কাঁঠালতলায় বসে রয়েছেন। তিনি আমার অভিযোগ গ্রহণ করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।’

শহরের মিলনপুর এলাকা থেকে সাধারণ ডায়েরি করতে আসা ফাহিম রেজা বলেন, ‘থানায় ওসির কক্ষে গিয়েছিলাম কিন্তু তাকে পাইনি। পরে দেখি তিনি গাছতলায় বসে অফিস করছেন। ওসিকে কাগজ দিলে তিনি বিনা খরচে সেটি নথিভুক্ত করলেন। আগে জানতাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে টাকা-পয়সা লাগে; কিন্তু আজকে আমার সেই ধারণা পাল্টে গেছে।’

শহরের মুসলিম নগর এলাকার ৭০ বছরের বৃদ্ধা জুলেখা বেগম বলেন, “ইলিয়াস আলী নামে একজনকে সাড়ে নয় হাজার টাকা ধার দিয়েছিলাম। এরপর অসংখ্যবার তার কাছে টাকা ফেরত চেয়েছি কিন্তু সে টাকা দেয়নি। পরে এসেছি থানা চত্ত্বরে অবস্থিত ‘জনগণের দরবারে’। ওসি অভিযোগ গ্রহণ করে ইলিয়াসকে আটক করেছেন। আমার টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।”

অভিযোগ নিয়ে আসা সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ বলেন, “শুনেছি ওসি নিজেই ‘জনগণের দরবার’ খুলে বসেছেন মানুষকে সেবা দিতে। এটি শুনেই চলে এসেছি পারিবারিক জমি দখলমুক্ত করার অভিযোগ নিয়ে। তিনি অভিযোগ গ্রহণ করেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় ওসি আমাকে তিনশ টাকা দিয়েছেন যাতায়াত ভাড়ার জন্য।”

ওসি আশিকুর রহমানের ‘জনগণের দরবার’ নামের এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁওবাসী।

শহরের রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর আগে কখনো এমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পুলিশের এ ধরনের অভিনব কার্যক্রম সব সময় অব্যাহত থাকুক। তাহলে থানায় সাধারণ মানুষ তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই গত ৩১ অক্টোবর থেকে আমি এটা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওসির রুমে ঢুকতে সাধারণ মানুষ ভয় পায়। এজন্য অনেকে দালাল শ্রেণির লোক নিয়ে থানায় আসেন। জনগণের সেই পুলিশভীতি কাটাতে নিজ কক্ষ ছেড়ে থানা চত্ত্বরে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় অফিস শুরু করেছি।’

“আমার থানায় যেকোনো মানুষ ভয়ভীতি ছাড়াই আমার কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারবে। প্রত্যেক দিন গাছতলায় বসেই অফিস করব। আমি প্রমাণ করতে চাই পুলিশ জনগণের বন্ধু।”

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ঠাকুরগাঁও পুলিশ বাহিনী সব সময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে। ওসি আশিকুরের অভিনব এই উদ্যোগও তার একটি প্রমাণ। আমরা মূলত কাজ করছি জনগণের সেবার লক্ষ্যে।”

 

ঠাকুরগাঁও/তানভীর হাসান তানু/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়