ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাখিদের বাসাভাড়া ৩ লাখ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১২ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাখিদের বাসাভাড়া ৩ লাখ টাকা!

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি আমবাগানে বাসা বেঁধেছে অসংখ‌্য শামুকখোল পাখি। এতে বাগানে আমের ফলন কম হচ্ছে। ফলে বাগানমালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাগানমালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে বাৎসরিক ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়েছে জেলা প্রশাসন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে এ টাকা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে তা প্রতিবছর আমবাগানের মালিক বা ইজারাদারকে দেয়া হবে। যতদিন ইচ্ছে পাখিগুলো ওই বাগানে থাকবে। সরকার পাখিদের ‘বাসাভাড়া’ বহন করবে।

মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ এবং জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমবাগানটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে ৩৮টি আমগাছে শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধেছে। ওই গাছগুলোতে বছরে কী পরিমাণ আম ধরে এবং পাখির কারণে আমের ফলন না হলে কেমন ক্ষতি হবে, তা নিরূপণের চেষ্টা করেছি।

তিনি আরো বলেন, মালিকপক্ষ, ইজারাদার, স্থানীয় মানুষ, আম ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষের হিসেব অনুযায়ী পাখির বাসা সেখানে থাকলে বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। সে অনুযায়ী আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। সোমবার (১১ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক সে প্রতিবেদন যাচাই করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ পেলে তা বাগানমালিক ও ইজারাদারদের দেয়া হবে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল, সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা বাগানটি সার্ভে করে এ হিসাব বের করেছেন। সেটি প্রতিবেদন আকারে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুত বরাদ্দ অনুমোদন হবে। তা ওই বাগানমালিককে দিয়ে আমরা পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের ওই বাগানটিতে গত চার বছর ধরে বর্ষা মৌসুমের শেষদিকে শামুকখোল পাখি এসে বাসা বাঁধে। শীত শুরু হলে ও বাচ্চা উড়তে শিখলে চলে যায়। এবারও সেখানে কয়েক লাখ পাখি বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শেখেনি।

এদিকে, পাখি গাছে বাসা বাঁধায় গত দুই বছর বাগানের পরিচর্যা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমের ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগান ইজারা নেয়া আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তিনি গত ৩০ অক্টোবর একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙে দেন এবং সব বাসা ভেঙে গাছ খালি করতে চান। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মানুষ তাকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন।

একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক বসে। সেখানে ইজারাদার আতাউর রহমান পাখিরা ১৫ দিনের মধ্যে চলে না গেলে তিনি সেগুলো তাড়িয়ে দেবেন বলে আলটিমেটাম দেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়ার আরজি জানান একজন আইনজীবী। আদালত শুনানি শেষে ‘বাগানের পাখির বাসা কোনোভাবে ভাঙা যাবে না’ বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগানমালিকের সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ করে, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন।


রাজশাহী/তানজিমুল হক/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়