ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভোরে বেদনা বুকে নিয়ে ঝরে পড়ে শিউলি

সাইফুল্লাহ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভোরে বেদনা বুকে নিয়ে ঝরে পড়ে শিউলি

নাম তার শিউলি। অনেকে শেফালি নামেও চেনেন। সন্ধ্যার পরপরই ফুলটি প্রস্ফুটিত হয়ে সারারাত আশপাশ সুবাসিত করে।

রাতের আঁধারে নিজের রূপ পুরোটা ছড়িয়ে, বাতাসে বিলিয়ে দেয় নেশা লাগানো সুবাস। তারপর ভোরের আলো ফুটলেই বেদনা বুকে নিয়ে ঝরে পড়ে শিউলি।

দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান উত্তরে নেপাল অঞ্চল পর্যন্ত শিউলি ফুলের দেখা পাওয়া যায়। তবে এর আদিনিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। শিউলি ফুলের ইংরেজি নাম : Night-flowering Jasmine.পরিবার : Oleaceae. উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম : Nyctanthes arbor-tristis. লাতিন Nyctanthes--এর অর্থ হচ্ছে ‘সন্ধ্যায় ফোটা’ এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে ‘বিষন্ন গাছ’। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে ‘বিষন্ন’ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এ রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। দিনের আলোতে শিউলি ফুল উজ্জ্বলতা হারায় কখনও কখনও একে ‘tree of sorrow’ বা ‘দুঃখের বৃক্ষ’ও বলা হয়।

শিউলি মূলত শরৎ ঋতুর ফুল। তবে বছরের অন্য ঋতুতেও গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। ফুল ছোট, সুগন্ধযুক্ত। কোমল এ ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে, পাপড়ির রঙ সাদা হলেও বোঁটার অংশ কমলা রঙের এবং পাপড়ির সংযোগ স্থল বৃত্তাকার কমলা রঙে বিস্তৃত থাকে।

রাতের রাণী বলে খ্যাত শিউলি ফুল রাতের বেলা ফোটে এবং সকালে ঝরে পড়ে। ভোরে শিউলি গাছের তলা সাদা ফুলে ফুলে ভরে যায়। গ্রামাঞ্চলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরে।

শিউলি ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণে বাগান, উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মেতে ওঠে। সকালে শিশির মাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। শিউলি মূলত শরতেরই ফুল। তবে শিউলির শোভা ও সৌরভ হেমন্তও কিছুটা থেকে যায়। 

মৌলভীবাজার শহরের অনেকের বাসাবাড়িতে, রাস্তাঘাটে দেখা যায় এই শিউলি ফুল গাছ। পাতায় ভরা গাছ যতটা না সুন্দর লাগে দেখতে, তার চেয়েও অনেক বেশি নজর কাড়ে গাছে যখন ফুল ফোটে।

শহরের বনশ্রী এলাকায় তেমনই এক ফুল ভরা শিউলি গাছের দেখা মিললো। সকালে শত শত শিউলি ফুলে ছেয়ে থাকে গাছের তলা। ভোরে অনেকেই আসেন এই ফুলের সুভাস নিতে। কেউ ফুলগুলো কুড়িয়ে দুই হাতে করে বুক ভরে সুগন্ধ নেন। আবার কেউ এগুলো কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে যান। কেউ বা আবার ফুলের ছবি তুলে ব্যস্ত থাকেন। সুন্দর মুহূর্তকে ক‌্যামেরাবন্দী করেন।

কথা হয় এখানকার বাসিন্দা রাকিব রাহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাশেই আমার বাসা। প্রতিদিন ফজরের পরপরই একটু হাঁটাহাঁটি করি। সকালে শিউলি গাছের নিচে এসে দাঁড়াই।  মনটা ভাল হয়ে যায়।  এই ফুল রাতে ফোটে আর সকালে তা ঝরে যায়। আবার কিছু সময় পর আর সেই ফুলের সৌরভ থাকে না, তদ্রূপ মানুষের গৌরবও চিরকাল স্থায়ী থাকবে না। প্রকৃতি আমাদের সব সময় শেখায়।’



মৌলভীবাজার/সাইফুল্লাহ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়