ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুবির উন্নয়ন কাজে লুটপাটের অভিযোগ ৪২ শিক্ষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুবির উন্নয়ন কাজে লুটপাটের অভিযোগ ৪২ শিক্ষকের

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ৪২ জন শিক্ষক। মঙ্গলবার শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অভিযোগপত্র বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেয়া তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, অপরাজিতা হল, প্রশাসনিক ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, লাইব্রেরি ভবন, গেস্ট হাউসসহ নতুন ভবন নির্মাণে নিম্নমাণের কাজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

অভিযোগপত্রে দুর্নীতির প্রমাণ হিসেবে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়,  বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের ছাদ সাড়ে ৫ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও ছাদের পুরু ৩ থেকে সাড়ে ৪ ইঞ্চি। ফলে এক বছরের মধ্যে ভবনের ছাদ, বিম, দেয়ালসহ অসংখ্য জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। তদন্ত কমিটির ভাষ্য অনুসারে, ছাদ নির্মাণে এমন দুর্নীতির কারণে সেই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুর্নীতির কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসততা ও অভ্যন্তরীণ প্রকৌশলীদের দুর্নীতিকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নির্মাণের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির চিত্র শিক্ষকরা তুলে ধরেছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, দুটি প্রতিষ্ঠানের কোটেড অ্যামাউন্ট এবং  ডিভিয়েশনের হার হুবহু এক হওয়ার পরও টেন্ডার কমিটি বিষয়টি আলোচনায় না এনে আলোচিত ক্যাসিনো ব্যব্যসায়ী জিকে শামীমের ‘ডিসিএল অ্যান্ড জিকেবিপিল জেভি’ নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র অনুমোদন করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্থার পক্ষ থেকে দরপত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের সভায় কমিটি দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত ১৮ অক্টোবর সভায় আবার জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানের দরপত্র অনুমোদন করা হয়েছে।

অভিযোগকারী শিক্ষকদের একজন ইংরেজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুজ্জান বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী পাঠদান করেন। ভবনের নানা জায়গায় দৃশ্যমান ফাটলের কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে শঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার জন্য।’’

অভিযোগকারী অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, প্রশাসন তাদের এসব অভিযোগের আশানুরূপ ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, শিক্ষকরা যেসব সমস্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন, তার অধিকাংশই পুরাতন এবং এসবের সমাধানও করা হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, শিক্ষকরা দুর্নীতির বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন তার ভিত্তি নেই। অর্থ লেনদেন বা দুর্নীতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জড়িত নয়। এ ছাড়া দুদকের প্রতিবেদন এখনো কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি।

 

খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়