খাল দখল, গ্রামবাসীর বিস্তর অভিযোগ

যশোরের ঝিকরগাছা উপজলোর ভায়না খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব‌্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, খালের জমি নিজেদের নামে দলিল করে নিয়েছেন তারা। এদিকে, খাল পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, ঝিকরগাছার রাধানগর গ্রামের মধ‌্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ভায়না খাল ভারতে ইছামতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই খাল কপোতাক্ষ নদে গিয়ে মিশেছে। স্থানীয়রা এই খালের পানি ব্যবহার করেন কৃষিকাজে। সাবেক ইউপি সদস‌্য রশিদ ও তার জামাতা লোকমান প্রথমে খালের জমি দখল করে মাছচাষ শুরু করেন। ১৯৯০ সালরে মাঠ জরিপে সরকারি খালের জমি ব্যক্তি মালিকানায় নেন তারা। এরপর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব‌্যক্তিরা খাল তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছচাষ করছেন। তারা স্থানীয়দের খালের পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না। খালে বাঁধ দেয়ায় র্বষা মৌসুমে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে আশপোশের প্রায় ২০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়।

রাধানগর গ্রামের মোজাহার রহমান বলেন, রাজাপুর গ্রামের লোকমান ও রশিদ ২০ বছর ধরে খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। জাল দলিলের মাধ্যমে তারা খালের জমি নিজ নামে রেকর্ড করেছেন।

ওই গ্রামের বৃদ্ধা সালেহা খাতুন বলেন, লোকমান ও রশিদ খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। আমাদের হাঁসও খালের কিনারে যেতে পারে না। ১১টি হাঁস মেরে ফেলেছে তারা। এই হাঁসের ডিম বেচে আমার সংসার চলত।

তিনি বলেন, দখলবাজরা খুব শক্তিশালী। খালে গোসল করতে গেলেও তারা বাড়িতে এসে আমাদের মারপিট করে।

একই গ্রামের বাসিন্দা শামছুর রহমান বলেন, খালের জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এই খালে একসময় আশপাশের গ্রামের লোকজন এসে মাছ ধরত। ওই মাছ বিক্রি করে অনেকের সংসার চলত। কিন্তু আজ কেউ খালে নামতে পারে না। নামলেই দখলকারীরা এসে আমাদেরকে মারপিট করে। আমাদের সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। সরকারি খালের জমি কীভাবে মানুষের নামে রেকর্ড হয়?

খালের ধারে কথা হয় ৮৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাঙে মানুষ মাছ ধরত। ২০০০ সালের বড় বন্যার আগে এই খাল দখল শুরু হয়। এখন খালের জমি মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। আজব দুনিয়াতে আর কত কিছু দেখব!

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় তাদের ওপর কয়েক দফা হামলাও হয়েছে। তারা ভায়না খাল পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে, অভিযুক্ত লোকমান জানান, তিনি ও তার শ্বশুর রশিদ মেম্বার ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক। কোরবান আলী নামে এক ব্যক্তির ওয়ারিশদের কাছ থেকে তিনি জমি কিনেছেন।

খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সরকারি খাল কারো দখলে থাকলে তা উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

যশোর/সাকিরুল কবির রিটন/রফিক