ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

ভরা পূর্ণিমায় শুভসন্ধ্যা সৈকতে জোছনা উৎসব

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভরা পূর্ণিমায় শুভসন্ধ্যা সৈকতে জোছনা উৎসব

আজ বৃহস্পতিবার বরগুনার তালতলী উপজেলায় ‘শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে’ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব হবে। উৎসব ঘিরে সপ্তাহব্যাপি প্রস্ততি শেষ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন।

শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য বরগুনা নৌবন্দর থেকে বেলা ১১টার দিকে লঞ্চ যাত্রা করবে। সন্ধ্যায় সৈকতে শুরু হবে উৎসবের কার্যক্রম। 

শুভসন্ধ্যার বেলাভূমিতে একদিকে সাগরের সীমাহীন জলরাশি, আরেক দিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। একদিকে দীর্ঘ ঝাউ বন, আরেক দিকে তিনটি বিশাল নদীর মোহনা। সব মিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার। এই শুভসন্ধ্যা সৈকতে ভরা পূর্ণিমায় জল ও জোছনায় একাকার হবে জোছনা বিলাসী মানুষেরা।

এ উৎসব ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এই উৎসবে যোগ করা হয়েছে নানা আয়োজন। উৎসব ঘিরে শুভসন্ধ্যা সৈকতে বাহারি পণ্যের পসরা সাজানো হচ্ছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে চারটি দোতলা লঞ্চ যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমীরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বন-বনানীর কোল ঘেঁষে বিকেল ৫টার দিকে লঞ্চ পৌঁছবে শুভসন্ধ্যার চরে। এরপর সেই বালুচরে শেষ বিকেলের ঘোরাঘুরির পর রাতভর ভরা চাঁদের জোছনায় রাখাইন নৃত্য, বাউল সঙ্গীত, মোহনীয় বাঁশির সুর, যাদু প্রদর্শনী, পুঁথিপাঠে মিনিযাত্রা ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে মেতে থাকবে দর্শকরা। এবারের জোছনা উৎসবে এলাকাবাসী ও দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন।

নদ-নদীর মোহনা ও শীতের হিম হাওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে উৎসবে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেহেতু দীর্ঘ সময় বালুচরে ঘোরাঘুরি; সেহেতু বেলাভূমিতে নিজেদের মতো করে আড্ডা জমাতে প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার এবং শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা ডাক্তারি পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাদের অনুরোধ করা হয়েছে- দরকারি সব ওষুধ সঙ্গে নিতে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগার; নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৈকতে থাকছে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাঁদনী রাতে তিন নদীর মোহনায় ছোট ছোট ট্রলার ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায়চালিত ট্রলারের ব্যবস্থা।

জোছনা উৎসবের উদ্যোক্তা সোহেল হাফিজ জানান, স্থানীয় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে যে উৎসব শুরু করেছিলেন, তা আজ সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা উৎসবে অংশ নেয়।

পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বেলাভূমিতে জেগে ওঠা চরের নাম রাখা হয়েছে ‘শুভসন্ধ্যা’।

ত্রি-মোহনার রূপালি জলরাশি ঘেঁষে বিস্তীর্ণ সৈকতে বসে হৈমন্তী পূর্ণিমা দেখে আপনি শিহরিত হবেনই। ঢেউয়ের ভালোবাসা পায়ে লাগিয়ে, মৃদ বাতাস গায়ে লাগিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে গোধূলী সন্ধ্যায় দেখা যাবে সূর্যাস্ত।

শুভসন্ধ্যার পাশে আশার চর। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও আসেন এখানে। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী আশার চরে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা জেলেরা শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি নিয়ে ব্যস্ততা। আশার চরের কাছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লীতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ।

 

বরগুনা/রুদ্র রুহান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়