নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার
জেলা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাতামুহুরী নদীর পানিতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করেন দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার ও মঙ্গলবার নদীর কলিঙ্গাকুম এলাকায় নদীতে বিষ প্রয়োগ করা হয়। এতে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ-লাখ ছোট-বড় মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে ওঠে।
বিষের কারণে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাবার নষ্ট হচ্ছে। ফলে মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তর্তী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া মাতামুহুরী নদী আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার ভূখণ্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে লামা, আলীকদম ও চকরিয়ার কিছু মানুষ নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে মিঠা পানির চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে থাকেন।
লামা পৌরসভার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, মাতামুহুরী নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হয়। যারা এসব কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেল নামের একটি পাহাড়ি লতা খুব বিষাক্ত। এ লতার রস পানিতে দিলে বিষক্রিয়ার কারণে মাছ পানির গভীর থেকে ওপরে উঠে আসে। ফলে যে কেউ সহজে মাছ ধরতে পারেন। দুর্বৃত্তরা ভোরে এ বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে ছিটিয়ে দেন। বিষক্রিয়ায় মাছ মরে ভেসে ওঠার সাথে সাথে নদীর ভাটি অংশে এসব মাছ দ্রুত আহরণ করা হয়।
কলিঙ্গাকুম এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, মৎস কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং স্থানীয়দের অসচেতনতার কারণে বান্দরবানের ঝিড়ি ঝর্ণা ও নদীতে নির্বিচারে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের হার বাড়ছে।
গত কয়েকদিনে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মরা, আধমরা মাছ পানিতে ভেসে উঠছে। এর বেশিরভাগই চিংড়ি পোনা। শত শত মানুষ হাত জাল, ঠেলা জাল, চালুনি, মশারি, ফিন্যা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন।
নদীতে মাছ ধরতে আসা ইসহাক, জসিমসহ অনেকে জানান, শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৮-১০ বার তারা এভাবে মাছ ধরেন। প্রতিদিনই নদীর কোনো না কোনো অংশে বিষ দেয়া হয়। গত বছরও নদীর তেলিরকু, কলিঙ্গাকুম, রেপারপাড়িকুমে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরেন তারা।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সকালে লোকজন নদীতে গোসল করতে গেলে তারা মরা-আধমরা চিংড়ির পোনা আর ছোট ছোট পুঁটি মাছের পোনা ভাসতে দেখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর ঘাটে ঘাটে স্থানীয়রা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সবাই এক কেজি-আধা কেজি করে মাছ পান। দুর্বৃত্তদের জালে বড় মাছগুলো আটকা পড়লেও ছোট মাছগুলো পানিতে ভেসে থাকে।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বিষে আক্রান্ত মাছ খেলে মানুষও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল কুমার সাহা বলেন, লামা ও আলীকদম উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় দুর্বৃত্তরা সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই বেআইনি কাজের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বান্দরবান/এস বাসু দাশ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন