ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সময় এখন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতাদের

ঝালকাঠি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সময় এখন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতাদের

শীত বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পিঠার চাহিদাও বেড়েছে ঝালকাঠিতে। আর তাই ঝালকাঠি শহরের মোড়ে মোড়ে পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে।

বিকেল হলেই পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। সন্ধ্যা হতেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে পিঠার দোকানগুলোতে। পিঠার ভালো বেচাকেনায় দোকানদার ও খুশি। অন্যদিকে তীব্র শীতে গরম পিঠার স্বাদ নিতে পেরে সাধারণ মানুষও খুশি।

ঝালকাঠি শহরের ঐহিত্যবাহী প্রেস ক্লাব, পৌরসভার খেয়াঘাট, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের সামনে, কামার পট্টির মোড়, সিটিপার্কসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধ-শতাধিক মৌসুমী পিঠা বিক্রেতা হরেক রকম পিঠার পসরা সাজিয়ে বসছেন প্রতিদিন। তারা বিকেল হলেই এসব স্থানে ছোট ছোট টং ঘরে পিঠা বিক্রির আয়োজন করেন। শীতের সন্ধ্যায় অনেকেই গরম কাপড় গায়ে জড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা ‘ভাপা’ পিঠার স্বাদ নিতে চলে আসেন পিঠার টংঘরে।

নারকেলের সাথে খেজুরের নতুন গুড়, আর নতুন চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হয় ভাপাপিঠা। ক্রেতাদের কাছে ভাপা পিঠার পাশাপাশি চিতই পিঠা, সাজের পিঠার কদর অনেক বেশি। আবার গুড়, নারকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পুলি পিঠাসহ বাহারি সব পিঠাও তৈরি হয় এসব দোকানে। চিতই পিঠার সাথে চিংড়ি, শুটকি, ধনেপাতা, লাউ পাতা, মরিচসহ হরেক রকমের ভর্তা পিঠার স্বাদকে আরো সুস্বাদু করে তোলে।

ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সামনে দেখা গেল, ৬টি মাটির চুলায় সাজের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত জাহিদুল। এ কাজে সহায়তা করছে তার স্ত্রী ও মেয়ে। ক্রেতাদের ভিড় সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দোকানি চুলা থেকে পিঠা নামাতেই ক্রেতাদের মধ্যে ছো মেরে হাতে তুলে নেয়ার প্রতিযোগিতা। কেউ কেউ ১০, ২০ কেউ আবার ১০০ পিস পিঠা বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন প্রেসক্লাব ও এর আশপাশে বিকেল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত পিঠার দোকানগুলো খোলা থাকে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায় শীতের পিঠার কদর।

পিঠা বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘প্রতিদিন আমি ৩৫ কেজি চালের গুড়ার সাজের পিঠা প্রতি পিস ৫ টাকায় বিক্রি করি। পাশাপাশি হরেক রকমের ভর্তা, খেজুরের গুড়, কোয়েল ও হাঁসের সিদ্ধ ডিম থাকে।

সনিয়া আক্তার নামে এক গৃহীনি বলেন, ‘দোকানের সাজের পিঠা বাসায় নিয়ে দুধ চিনির রসে ভেজালে বেশ নরম হয়। খেতেও দারুণ লাগে। বাচ্চারা পছন্দ করে বলে এই প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ৫ টাকা করে ১০০টি সাজের পিঠা কিনেছি।

শহরের কামার পট্টির মোড়ের ভাপা পিঠা বিক্রেতা মিজান বলেন, গরম পানির ভাপে এ পিঠা তৈরি করা হয় বলে এর নাম হয়েছে ভাপাপিঠা। পিঠাকে মুখরোচক করতে গুড় আর নারকেলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবণ মেশানো হয়। ভাপাপিঠা তৈরিতে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মাটির হাঁড়ি ও মাঝ বরাবর বড় ছিদ্র করা মাটির ঢাকনা। হাঁড়িতে ছিদ্র করা ঢাকনা লাগিয়ে আটা গুলিয়ে ঢাকনার চারপাশ ভালভাবে মুড়ে দিতে হয়। যাতে হাঁড়ির ভেতরে থাকা গরম পানির ভাপ বের হতে না পারে। ছোট গোল বাটি জাতীয় পাত্রে চালের গুঁড়া খানিকটা দিয়ে তারপর খেজুর অথবা আখের গুড় দিয়ে আবার কিছু চালের গুঁড়া দিয়ে বাটি পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে ঢাকনার ছিদ্রের মাঝখানে বসিয়ে দেয়া হয়। ২/৩ মিনিট ভাপে রেখে দিলে সিদ্ধ হয়ে তৈরি হয় মজাদার ভাপাপিঠা।

সপরিবারে পিঠার দোকানে আসা সরকারি চাকরিজীবী মোঃ মামুন হোসেন বলেন, ‘একদিকে সময়ের অভাব, অন্যদিকে বাসায় পিঠা বানানো খুবই ঝামেলার। তাই পরিবারসহ পিঠা খেতে এলাম। এদের তৈরি পিঠা এক কথায় অসাধারণ।

পৌরসভার খেয়াঘাটের পিঠা বিক্রেতা পারভীন বেগম (৩২) বলেন, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়ির গৃহস্থলি কাজ করি। তারপর বিকেল থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত  পিঠা বিক্রি করি। আমার দৈনিক ৫শ থেকে ৬শ টাকা বাড়তি আয় হয়। বাড়তি আয়ে আমার সংসার অনেক ভালো চলে।’

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের সামনের পিঠা বিক্রেতা মজিবুর রহমান বলেন, ‘সবকিছুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় সাজের পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করতে কষ্ট হয়। তারপরেও ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে প্রতি পিস পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করি।’

পিঠা খেতে আসা ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন হিমু বলেন, ‘পিঠার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় আবহমান বাংলার চির চেনা ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। ব্যবসায়ীদের উচিৎ হবে‘ পিঠা ধুলা ও জীবানু মুক্ত রাখা’।



ঝালকাঠি/ অলোক সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়