ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রিয় নেতার মৃত্যুতে আজও কাঁদে কিশোরগঞ্জবাসী

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৩ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রিয় নেতার মৃত্যুতে আজও কাঁদে কিশোরগঞ্জবাসী

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাজনীতির এক কিংবদন্তী মহাপুরুষ। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে একটি বছর। ২০১৮ সাল থেকেই তিনি ভুগছিলেন মরণব্যাধী ফুসফুসের ক্যানসারে। ক্যানসারের চতুর্থ ধাপ পেরিয়ে যখন ক্রমাগত তাকে মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছিল, তখন ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশবরেণ্য এই নেতা। প্রিয় নেতার এমন মৃত্যু আজও স্তম্ভিত করে কিশোরগঞ্জবাসীকে।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে দেশ ও দলের প্রিয়ভাজন হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের উন্নতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। তাইতো সকল রাজনৈতিক নেতারাই তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আবেগতাড়িত হয়ে উঠেন। তাদের কাছেও তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। এমন নেতার চলে যাওয়ায় শুধু তার পরিবার নয়, অভিভাবকহীন জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও ছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের  অসামান্য অবদান। এই ত্যাগী, সৎ ও মেধাবী নেতা ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এরপর থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর জানাযায় অংশ নিতে লাখ লাখ মানুষের স্রোতধারা তৈরি হয়েছিল শোলাকিয়া ময়দানে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি মানুষের এমন হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক মহাপুরুষের শূন্যতা দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হলেও তার অসমাপ্ত কাজগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দেখেতে চায় কিশোরগঞ্জবাসী।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সৎ ও ন‌্যায়ের এক উন্নত দৃষ্টান্ত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার মতন মেধাবী ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বাহক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রাজনীতি যদি হয় রাজার নীতি তার পুরোটাই ছিল উনার মাঝে বিরাজমান। সৈয়দ আশরাফ জীবিত থাকাবস্থায় আমাদের ছিল সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা। কিন্তু এখন সবকিছুই যেন কেমন নিস্ক্রীয় ও সংকুচিত। ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা সঠিক রাখতে তাকে চর্চা করা উচিত।

গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট দোলন ভৌমিক বলেন, তিনি ছিলেন এ দেশের একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা। ওয়ান ইলিভেনের সময় গণতন্ত্রকে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। তিনি শুধু কিশোরগঞ্জের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন গণ মানুষের নেতা। উনি খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতেন। কোন অহংকার বা লোভ লালসা তার মাঝে ছিল না। তিনি শুধু কিশোরগঞ্জ নয় পুরো দেশের উন্নয়নের কথা ভেবেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আপন চাচাত ভাই। প্রিয় বড় ভাইয়ের কথা ভেবেই আবেগে কাঁদতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাবার পর আমাদের মাথার ছায়া হিসেবে ছিলেন আশরাফ ভাই। এমন একজন মাটির মানুষ, যার মাঝে কোন লোভ ছিল না। মন্ত্রীত্ব বা পদের কাঙাল ছিলেন না তিনি। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তিনি যখন নির্বাচনে অংশ নিলেন, তখন প্রতিটি ইউনিয়নে পায়ে হেঁটে নির্বাচনের প্রচার করেছেন। যে যখন যা দিয়েছে তাই খেয়ে আবার প্রচারণায় নেমেছেন। সরকারি ভাতার বাইরে তার কোন অর্থের যোগান ছিল না। তাই হয়তো তিনি আজো সারা দেশের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ হিসেবে বিরাজ করছেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাল ধরেছেন।

তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুধু আমার ভাই নন, তিনি আমার পিতার জায়গায় ভূমিকা রেখেছিলেন। খুব ছোট বেলায় বাবাকে হারানোর পর আদর ভালোবাসা ও শাসনের মধ্যে ভাইয়ের মাঝে পিতার শূন্যতা পূরণ করতে পেরেছিলাম। তিনিই আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। তিনি বলতেন, চোখ বন্ধ করে তুমি যখন ভাববে তুমি কার মেয়ে, কে তোমার বাবা, কার রক্ত তোমার শরীরে বইছে। তখনই সবকিছু তোমার কাছে পরিচ্ছন্ন ভাবে ভেসে উঠবে।

তিনি বলেন, বড় ভাইয়ের আদর্শিক পথ অনুসরণ করে রাজনৈতিক পথ পাড়ি দিতে চাই। তার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।

প্রবীণ রাজনৈতিক ও বিশিষ্টজনেরা মনে করেন- সৎ, আদর্শ ও ন্যায়ের অনুস্মরণীয় এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তার সময়ে রাজনীতি চর্চারও ভালো পরিবেশ ছিল। বর্তমানে তারা সে পরিবেশ ও জায়গা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। সৈয়দ আশরাফ বেঁচে থাকলে দেশ গণতান্ত্রিক চর্চায় আরো এগিয়ে যেত বলে মনে করছেন তারা। তাছাড়া সৈয়দ আশরাফের হাত ধরে যে প্রকল্পগুলো রয়েছে তার পূর্ণ বাস্তবায়ন চায় কিশোরগঞ্জবাসী।


কিশোরগঞ্জ/রুমন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়