ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নিজেদের রাস্তা নির্মাণ করলেন নিজেরাই

নওগাঁ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিজেদের রাস্তা নির্মাণ করলেন নিজেরাই

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর সরকারি দপ্তরে মাত্র দেঢ় কিলোমিটার রাস্তার জন‌্য বহুদিন ধরনা দিয়েছেন এলাকাবাসী। সবাই রাস্তা তৈরি করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় করেছেন বহুবার কিন্তু সেই রাস্তা আর কেউ নির্মাণ করে দেননি। 

অবশেষে গ্রামবাসীরা ঐক‌্যবদ্ধ হয়ে উদ‌্যোগ নিয়ে নিজেদের রাস্তা নিজেরাই বানিয়ে ফেললেন।

এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিতকীডাঙ্গা ও মনিপুর গ্রামের বাসিন্দারা। বরাদ্দ না পাওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেড় কিলোমিটার রাস্তা তারা নিজেরাই নির্মাণ করেছেন।

এ কাজে এলাকার প্রায় পাঁচশত নারী, পুরুষ ও কিশোররা অংশগ্রহণ করেন। সকালে তারা দা, কোদাল ও প্রয়োজনীয় সড়ঞ্জাম নিয়ে রাস্তার নির্মাণ কাজে নেমে পড়েন। এ রাস্তার ফলে চার কিলোমিটার হাঁটা থেকে রক্ষা পাবেন এলাকাবাসী। শিক্ষার্থীরা কম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। কৃষকরা সহজে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে পারবেন। চলাচলে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

সোমবার উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের হরিতকীডাঙ্গা থেকে মণিপুর গ্রামের উত্তর মাথা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নতুন রাস্তাটি মাটি কেটে নির্মাণ করা হয়।

হরিতকীডাঙ্গা ও মনিপুর গ্রামের বাসীন্দারা জানান, রাস্তা নির্মাণের জন‌্য এলাকার লোকজন চেয়ারম‌্যান, সাংসদ ও সরকারি দপ্তরে বহুবার আবেদন করেছেন। ভোটের সময় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা বেশ আশ্বাসও দিয়েছিলেন । কিন্তু পরে তারা আর কেউ এগিয়ে আসেননি।  অবশেষে গ্রামের লোকজন সরকারি অনুদান ও কোনো বরাদ্দের আশায় না থেকে নিজেরাই রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

মণিপুর গ্রামের আব্দুল মণ্ডল, রামরামপুর দেওয়ানপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুস দেওয়ানসহ অনেকেই দুই-তিন ফসলি জমি এই রাস্তা নির্মাণের জন্য দান করেন।

এ ব্যাপারে ধামইরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.কামরুজ্জামান রাইজিংবিডিকে জানান, মণিপুর থেকে হরিতকীডাঙ্গা বাজারের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। এ বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ধামইরহাট-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিলনস্থল। কিন্তু ওই সব এলাকার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীকে প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরে এ বাজারে আসতে হতো। এতে তাদের অনেক ভোগান্তি হতো।

যার কারণে নতুন রাস্তা নির্মাণ গ্রামীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। রাস্তাটি প্রায় আট ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জমিদাতাসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সফলভাবে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

হরিতকীডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মণিপুর গ্রামের লামিয়া সুলতানা এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল রাহীম জানায়, এখন মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারলে বিদ্যালয়ে যাওয়া যাবে। এখন আরো ভালো করে পড়াশুনা করতে পারবে তারা।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক রঞ্জু রাইজিংবিডিকে জানান, হরিতকীডাঙ্গা হাটে কৃষি পণ্য নিয়ে যেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হতো। এ রাস্তা নির্মাণ হওয়ার অনেক উপকার হয়েছে। পণ‌্য পরিবহনে সময় ও খরচ দুটোই কমে যাবে। এতে আরো বেশি লাভবান হবে কৃষক।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ- এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত হলে অবশ্যই এটিকে পাকা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার গনপতি রায় রাইজিংবিডিকে বলেন, সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসী নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ রকম ভালো কাজের সহযোগিতা সব সময় থাকবে।



সাজু/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়