ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রঙিন মাছের চাষে রঙিন হয়ে উঠেছেন শিহাব

রাজিব হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রঙিন মাছের চাষে রঙিন হয়ে উঠেছেন শিহাব

অ্যাকুরিয়ামে নয়, পুকুরের পানিতে খেলে বেড়াচ্ছে রং বেরংয়ের মাছ। লাল নীল কমলা কালো বাদামি হলুদ বর্ণিল মাছের ছড়াছড়ি।

রঙিন মাছের এই চমকপ্রদ পুকুরটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। পুকুরে রয়েছে গোল্ড ফিস, কমেট, কৈ কার্ভ, রেপটিকা, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কৈ, মৌলি, মলি, গাপটি, এ্যানজেল সহ ১৬ জাতের মাছ। যা দেখলে যে কারোর মন ভরে যায়।

কলেজ ছাত্র শিহাব উদ্দিনের গড়ে তোলা এই রঙিন মাছের খামার দেখতে এখন ভিড় জমে মানুষের। শিহাবের স্বপ্ন- এই রঙিন মাছের চাষ রাঙিয়ে দেবে তার জীবন।

বর্তমানে রঙিন মাছের চাষে তার পড়ালেখার খরচ চলছে। কষ্ট করে ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় করতে হচ্ছে না দরিদ্র বাবাকে। বাবা আব্দুল মান্নান ছেলের এমন উদ্যোগে খুব খুশি। বিষয়টি ভাল লাগছে তারও।

শিহাবের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের হাসানহাটি গ্রামে। পড়ালেখা করছেন যশোরের এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বোন ফারজানা ইয়াসমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর ছোট ভাই ফরহাদ উদ্দিন পড়ছে নবম শ্রেণিতে।

২০১৮ সালের গোড়ার দিকে শিহাব বাড়ির আঙিনার একটি পরিত্যাক্ত জমিতে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তুলেছিলেন ওরনামেন্টাল ফিস ফার্ম। প্রথম বছরই এই ফার্ম এর মাছ বিক্রি করে তার আয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এবছর মা মাছ ছেড়েছেন পুকুরে। বাচ্চা তৈরি করবেন হাউজে।  

শিহাব জানান, ২০১৮ সালে এক বাসায় একটি অ্যাকুরিয়াম শপে রঙিন মাছ দেখে ভালো লাগে তার। কৌতুহলী হয়ে মাছের দাম জানতে চান। এরপর জানতে পারেন মাছগুলি অনেক মূল্যবান। তিনি আরো জানতে চান এগুলো কোথা থেকে এসেছে। ওই বাসার মালিক জানান, রঙিন মাছগুলো বিদেশ থেকে আনা হয়। বর্তমানে দেশেও এই মাছের চাষ হচ্ছে। সেখান থেকেই রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা মাথায় আসে তার। 

তিনি জানান, বছরের শুরুতে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পলিথিন বিছিয়ে একটি হাউজ তৈরি করে অল্প কয়েকটি রঙিন মাছ ছাড়েন। দুই মাসের মধ্যে ছোট মাছগুলো বেশ বড় হয়ে যায়। আরো মা মাছ সংগ্রহ করেন সাতক্ষিরার কলারোয়া থেকে। ১৬০ টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আসেন। এই মাছ বড় করতে তাকে আরো ৫ টি হাউজ তৈরি করতে হয়। এরপর খামারে থাকা মাছগুলো বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাছ ডিম দেয়। ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদিত হয়, যা বাজারে বিক্রি করেন। যারা অ্যাকুরিয়ামের ব্যবসা করেন তারা এই মাছগুলো ক্রয় করেন। ২০২০ সালের শুরুতে তিনি ৬টি হাউজের পাশাপাশি আরো একটি পুকুরে এই মাছের চাষ করছেন। যেখানে তিনি ১৫শত মা মাছ আর ১৫০ টি পুরুষ মাছ ছেড়েছেন।

 

 

তিনি জানান, তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলো বড় হবে। তখন হাউজে দিয়ে ডিম ফুটাবেন। তারপর রেনু বিক্রি করবেন। আশা করছেন এবার কয়েক লাখ টাকার রঙিন মাছ বিক্রি করতে পারবেন।

শিহাব জানান, বর্তমানে তার খামারে ১৬ প্রজাতির মা মাছ রয়েছে। যার একটি মাছ বছরে প্রায় ৩ হাজার রেণু পোনা দেবে। ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হলে এই মাছ বিক্রি করা হয়। বছরে একবার ডিম দেয় ৭২ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফোটে। এ সময় অক্সিজেন দেওয়া থেকে নানা ভাবে সতর্ক থাকতে হয়।

শিহাব বলেন, ‘শুরুতে এলাকার মানুষ তার এই চাষ দেখে হাসাহাসি করতেন। সবাই মনে করতেন এটা আমার খেয়ালিপানা। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এখন এলাকার মানুষ ছাড়া মৎস্য কর্মকর্তারাও তার এই মাছ দেখতে আসছেন। অনেকে খামার দেখতে এসে মাছও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো জানান, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে এই মাছ চাষে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে। যে কারণে ভালোভাবে চাষটি করতে পারছেন। সরকারিভাবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। সব ঠিকঠাক থাকলে এই খামারই জীবনকে বদলে দেবে, আশা করছেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, শিহাব উদ্দিনের রঙিন মাছের চাষ তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। দেখে খুবই ভালো লাগল। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের আবহাওয়ায় এই মাছ চাষ সম্ভব।’

 

ঝিনাইদহ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়