গাজীপুরে টিউলিপ ফুল!
টিউলিপ সাধারণত শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল। আর আমাদের দেশ ছয় ঋতুর। এই ছয় ঋতুর দেশে টিউলিপ চাষ দুরূহ ব্যাপার। কিন্ত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন সেই দুরূহ কাজটি করেছেন। এবার তিনি টিউলিপের চাষ করেছেন। তার বাগানে ফুলও ফুটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে এই প্রথম টিউলিপ ফুল চাষে সফলতা এসেছে।
তিনি গত বছরের ডিসেম্বরে তার বাগানে ১ হাজার টিউলিপের বাল্ব (কন্দ) বপন করেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু হয়। তার বাগানে চার ( লাল, কমলা, হলুদ ও বেগুনি) রঙের ফুল ফুটেছে। সফলতা পেয়ে তিনি আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিউটিপ ফুল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে। শখের বসে প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েন। এখন তার ফুলের ৩টি বাগান রয়েছে। ৩ বিঘা নিজের জমি, আর ১৫ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে তিনি এই বাগানগুলো গড়ে তুলেছেন। এসব বাগানে এখন তিনি বাংলা গোলাপ, চায়না গোলাপ, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি ও লিলি ফুলের বাণিজ্যিক চাষ করেন। একজন সফল ফুলচাষি হিসেবে তিনি ২০১৭ (বাংলা-১৪২২) সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।
ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, নেদারল্যান্ডসের রয়েল বেলজেস্টেন নামক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ওই ১ হাজার টিউলিপের বাল্ব উপহার পান। এরপর তিনি বাল্বগুলো তার বাগানে বপন করেন। পরিচর্যা শেষে ৪০ দিন পর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ শতাংশ গাছে ফুল ফুটেছে।
তিনি বলেন, ‘টিউলিপ ফুল চাষে সাধারণত ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এবছর আমাদের দেশের তাপমাত্রা ছিল ১১ থেকে ৩০ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আনা একটি নেট চাষ করা টিউলিপ ফুল গাছের উপর ব্যবহার করেছি। ওই নেট ৪/৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তামপাত্রা কমাতে সক্ষম।’
আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করতে হয়। চাহিদার কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে তিনি তার স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন। ফুল বাগানের নামকরণ করেছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’ নামে। পরীক্ষামূলক টিউলিপ ফুল চাষ করে সফলতা পেয়ে তিনি খুশি। তিনি মনে করেন, দেশের উত্তরাঞ্চলেরজেলাগুলোতে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকে বিধায়, সেসব জেলায় টিউলিপ চাষ করে আরো সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, সম্প্রতি তার টিউলিপ বাগান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহিদুল ইসলাম, সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. খন্দকার আব্দুস সাত্তার পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম জানান, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ করে ফুলচাষি দেলোয়ার সফলতা পেয়েছেন। টিউলিপ চাষের বাণিজ্যিক সম্ভবনা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
গাজীপুর/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন