ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদিবাসীদের শিকারে বিলুপ্ত হচ্ছে বেজি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদিবাসীদের শিকারে বিলুপ্ত হচ্ছে বেজি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝোঁপঝাড় কমে যাওয়ায় বেজির সংখ‌্যাও কমে গিয়েছিল আগেই। তবে এখন আদিবাসীদের শিকারে বিলুপ্ত হতে চলেছে এই বন‌্যপ্রাণীটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায় এক সময় বেজির বিচরণ বেশি থাকলেও ঝোপঝাড়, নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জমি কমায় এই বন‌্যপ্রাণীটি সংখ‌্যা কমছিল। তবে বর্তমানে বেজি কমে যাওয়ার মূল কারণ আদিবাসীদের শিকার। তারা গোটা বছর দল বেঁধে বরেন্দ্র এলাকায় বেজি শিকার করে থাকেন। সম্প্রতি বরেন্দ্র এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

আদিবাসীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওইসব এলাকায় তির দিয়ে বেজি শিকার করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নাচোল উপজেলার মির্জাপুরে চোখে পড়ে একদল আদিবাসীর বেজি শিকারের দৃশ্য। সাতজন দল বেঁধে বেজি শিকার করেছেন চারটি। তারা মূলত গমক্ষেত ও পেয়ারা বাগানে বেজি শিকার করছেন।

শিকারী সুজন জানান, ‘বেজির মাংস খেতে অনেক মজা। সে জন্যই দল বেঁধে বেজি শিকার করে থাকি। নিজেরাও খাই, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মেহমানদেরও খাওয়াই। ’

মির্জাপুর গ্রামের অমেলা বেগম জানান, বেজি অনেক উপকারে আসে। তার পরেও আদিবাসীদের ধরে নেয়ার কারণে আগের মত আর চোখে পড়েনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হোদা জানান, বেজি ফসলের ক্ষেতের ছোট-বড় ইঁদুর, বিষাক্ত সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শত্রু  মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস-মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের ক্ষেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না। বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচারের সমন্বয়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন, ‘বেজিসহ অন্য উপকারী জীব রক্ষা করতে আমরা বরেন্দ্র এলাকার আদিবাসি স্কুলসহ পাড়া মহল্লায় জনসচেতনামূলক প্রচারণা অব্যহত রেখেছি। তার পরেও আদিবাসীরা বেজিসহ বেশ কিছু প্রাণি ধরে খেয়ে ফেলছে। বেজি রক্ষার্থে জনসচেতনতার প্রয়োজন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোর্ত্তুজা জানান, বেজি সাধারণত কোন কিছুর ক্ষতি করেনা। যারা বেজি শিকার করছে, তাদের বোঝানো উচিৎ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যান্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী বাঁচানোটা জরুরি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ/মিম্পা/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়