ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে ছেলে

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে ছেলে

প্রকৌশলী বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ছেলে জিয়াউর রহমানকে কারিগরি শাখায় পড়াশোনা করিয়েছেন বাবা। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে জিয়াউর। কিন্তু ছেলেকে প্রকৌশলী হিসেবে দেখার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন বাবা মকবুল হোসেন।

বাবার সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেত জিয়াউর। আজ বাবার লাশ বাড়িতে রেখে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হলো তাকে। এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী মকবুল হোসেনের ছেলে জিয়াউর এবছর উপজেলার অষ্টমনিষা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে সিভিল কনস্ট্রাকশন শাখায় এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংগ্র্রহণ করছে। তার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ভাঙ্গুড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জিয়াউর সবার ছোট। ছোটবেলা থেকে সে মেধাবী।

জিয়াউরের স্বজনরা জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা মকবুল হোসেন। পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পৌঁছানোর পরই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তার মরদেহ ভাঙ্গুড়া ফিরিয়ে আনা হয়। আর বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে কাঁদতে কাঁদতে তার স্বজনদের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় জিয়াউর।

কক্ষ পরিদর্শকরা জানান, জিয়াউর পরীক্ষার হলে মাঝেমধ্যেই কাঁদতে থাকে। তখন তারা তাকে সান্তনা দিয়ে শান্ত করেন। তবে, সে পরীক্ষার খাতায় সব সময়ই লেখার চেষ্টা করেছে। পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে পরীক্ষা দিলেও সে ভালো ফলাফল করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ বদরুল আলম বিদ্যুৎ বলেন, ‘পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন শিক্ষার্থী জিয়াউর। পরীক্ষার হলে সার্বক্ষণিক তার খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। সে বিমর্ষ হয়ে পরীক্ষা দিলেও তাকে খাতায় লিখতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এতে সে ধৈর্য ধরে খাতায় লিখেছে।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর নেই। এ সময় জানতে পারি সে সকালের খাবার না খেয়ে পরীক্ষার কক্ষে কাঁদতে কাঁদতে বসেছে। তখন আমি তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে অনেক বুঝিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।’


পাবনা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়