ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৫ টাকায় স্বর্গীয় হাসি!

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫ টাকায় স্বর্গীয় হাসি!

হাত নেই তাতে কী, হাত ছাড়াই পরিবারের ঘানি টানছেন ১৬ বছরের কিশোর রাকিবুল হাসান। তার বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ভাদুরিয়ার গুচ্ছগ্রামে।

এই বয়সে রাকিবুলের হাতে বই, খাতা-কলম থাকার কথা ছিল। অথচ, আট-দশজনের চেয়ে তার জীবন আলাদা। দুটি হাতই তার কনুইয়ের উপর থেকে কাটা। এই কাটা হাত নিয়েই ছোট ভাই-বোন আর বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যুদ্ধ করে চলেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। পেছন থেকে পিঠে কে যেন স্পর্শ করল। ঘুরে দেখি, এক কিশোর কাটা দুটো হাত উঁচু করে অপলক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে কিছু চাইছে। বুঝে নিলাম, সে কী চায়। পকেটে খুচরা ছিল পাঁচ টাকা। সেটি তার দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। টাকাটি তার পকেটে ভরে দেয়ার জন‌্য চোখের ইশারা করলো। নোটটি পকেটে থরে দিতেই সে মহাখুশি। চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়লো এক স্বর্গীয় হাসি।

কথা হয় রাকিবুলের সাথে। সে রাইজিংবিডিকে বলে, ‘সংসারের বড় ছেলে আমি। ছোট এক ভাই এক বোন, তারা লেখাপড়া করে। বাবা আতর, সুরমার ব্যবসা করেন। ছোট এই ব্যবসা করে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খান। তাই ভাই-বোন আর বাবা-মাকে সাহায্য করতে আজ আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। প্রায় চার বছর ধরে হিলি, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং বাসস্ট্যান্ডে এই কাজ করছি। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই’শ টাকা পাই, তাই দিয়ে কোনোমতে চলছি, পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি।’

বাসস্ট্যান্ডের পানের দোকান প্রশান্ত কুমারের। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, বেশ কয়েক বছর যাবত এই অসহায় ছেলেটিকে দেখছি। সে খুবই ভদ্র ও অমায়িক। যাত্রীরা সবাই তাকে দয়া করে দান করেন। যে যা দেন তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে সে।

রাকিবুলের বাবা মোশফিক রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দুঃখের কথা আর কী বলব। আমার ছেলেতো এমন ছিল না, সে ছিল সুস্থ-সবল। আট বছর আগের ঘটনা, রাকিবুল তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। একদিন ধানের মাঠে খেলতে যায় রাকিবুল। সেখানে পড়ে থাকা বিদুৎতের তারে তার দুই হাত জড়িয়ে যায়। বাঁচার কথায় ছিল না। অনেক চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করেছি, কিন্তু ছেলের হাত দুটো ভাল করতে পারিনি। রাকিবুল আমার বড় ছেলে। তাকে সুস্থ করতে আমার যা কিছু ছিল তা সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছি।’

ভাদুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসমান জামিল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাকিবুলের ছোট বেলায় এই দুর্ঘটনা হয়। আমি তার পরিবারসহ তাকে ভালোভাবে চিনি এবং জানি। তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি। রাকিবুলের দুর্ঘটনার কিছুদিন পর তার একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলাম।’

 

হিলি (দিনাজপুর)/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়