ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কপোতাক্ষ যেন পৌরসভার ময়লার ভাগাড়

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৫ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কপোতাক্ষ যেন পৌরসভার ময়লার ভাগাড়

প্রবহমান কপোতাক্ষ যেন ময়লার ভাগাড়। চৌগাছা পৌর শহরের হাট বাজার, কল-কারখানার বর্জ্য প্রকাশ্যেই ফেলা হচ্ছে নদে। সবচেয়ে বাজে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এই পৌর শহরের ব্রিজঘাট এলাকায়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেনগুলোর বিভিন্নস্থানে সরাসরি মলমূত্রের লাইন সংযোগ করে দিয়েছে পৌরসভা। ফলে ড্রেন দিয়ে নদে গিয়ে পড়ছে মানববর্জ্য।

আবার শহরের কসাইখানার ময়লা আবর্জনা, মুরগির বিষ্টা, রক্ত, কারখানার বর্জ্য, হাট বাজারে সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা সরাসরি নদের তীরে ফেলা হচ্ছে। ফলে কপোতাক্ষ রূপ নিয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

অভিযোগ রয়েছে, রাতের আঁধারেই এসব ময়লা ভ্যানে করে এনে নদে ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে নদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে এর নাব্যতা, হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। ময়লার কারণে নদের পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। আর তার প্রভাব পড়ছে নদের পাড়ে ও আশপাশে বসবাসরত মানুষের ওপর।

দেশের বিভিন্নস্থানে সরকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদ-নদী, খাল, হাওর দখলমুক্ত করছে। কিন্তু এ নদে বর্জ্য ফেলা বন্ধ ও ময়লার ভাগাড় সরানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। নদের নোংরা পরিবেশ ও পানি দূষণ ক্রমেই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই।

এ ব্যাপারে চৌগাছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবাদৎ হোসেন বলেন, ‘যে নদের পানি এক সময় মানুষ পান করতেন, ওজু-গোসল ও রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করতেন, সে নদের পানিতে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। পানির দুর্গন্ধ বেড়েই চলেছে। নদের পাড়ে দাঁড়ানোই যায় না ‘

তিনি বলেন, ‘নদের ব্রিজ ঘাট এলাকায় প্রকাশ্যে ময়লার ভাগাড় তৈরি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ ব্রিজ ব্যবহারকারী হাজার-হাজার মানুষ নদ পারাপারে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছেন। অন্যদিকে নদের জায়গা দখলে মেতে উঠেছেন ভূমিদস্যুরা।’

নদপাড়ের ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান, হাফিজুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদকে উপজেলার পৌর শহর, নারায়ণপুর বাজার, কাবিলপুর বাজার, ধুলিয়ানী বাজারসহ নদের পাড়ের হাট বাজারের সব আবর্জনা যেন ফেলার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ময়লা আবর্জনা মলমূত্র নদে ফেলায় পানি নষ্ট হচ্ছে। মরছে মাছ, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদের পাড়ে বসবাসকারী মৎস্যজীবীরা। নদে মাছ ধরতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে কপোতাক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নদটি রক্ষায় বিভিন্ন সচেতনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছি। তারপরও একটি পক্ষ জোর করেই নদকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে চৌগাছা পৌর মেয়র নুর-উদ্দীন আল মামুন হিমেল বলেন, ‘ময়লা ফেলার ভাগাড় না থাকায় কপোতাক্ষ নদের ব্রিজ ঘাট এলাকায় শহরের ময়লা ফেলা হয়। যা অন্যায়, নদের পানিতে বিভিন্ন ধরনের ময়লা ফেলায় পানি নষ্ট হচ্ছ।  ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। ময়লা ফেলার জন্য নতুন স্থান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। অতিদ্রুত সেখানে ময়লা ফেলা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদ রক্ষায় ইতোমধ্যে বিভিন্নস্থান থেকে অবৈধ পাটাতন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অতিদ্রুত ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করা হবে। নদ দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত পাটাতন সরিয়ে নিতে নোটিশ করা হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যাক্তি যদি নদ দখল ও দূষণের সঙ্গে জড়িত থাকেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


যশোর/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়