ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঠিকানা ‘বিদ্যা নীড়’

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঠিকানা ‘বিদ্যা নীড়’

আমাদের চারপাশে আছে হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশু। তাদের অনেকেই প্রতিভাবান। একটু সুযোগ-সুবিধা পেলে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে তারা।

কিশোরগঞ্জে এরকম কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার প্রত‌্যয় নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘বিদ্যা নীড়’। শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ সংলগ্ন নরসুন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই মহতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে বিদ‌্যা নীড়ের যাত্রা শুরু হয় মৌসুমী ঋতু নামের একজন কলেজছাত্রীর হাত ধরে।

মৌসুমী ঋতু তখন গুরুদয়াল কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কাজলা গ্রামে। একদিন কলেজের পাশে কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে দেখেন তিনি। তারা শিক্ষার সুযোগ পায়নি। একমুঠো খাবারের জন‌্য ভিক্ষা করে। কেউবা চটপটি-ফুচকার দোকানে শ্রম দেয়। এসব শিশুর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেন ঋতু। তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার ব্রত নিয়ে শুরু করেন ‘বিদ‌্যা নীড়’।

শুরুতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ঋতুকে। তবুও দমে যাননি তিনি। বান্ধবী সাকিলা ইশরাতের সহযোগিতায় কিছু শিশুকে একত্রিত করে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান শুরু করেন। একে একে ১৭ জন শিশু তাদের বিদ্যা নীড়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়ে যায়। কিন্তু বিনা খরচে পড়ানো হলেও বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষাউপকরণ নিয়ে। এ নিয়ে অনেকের উপহাস ও সমালোচনার শিকার হন ঋতু।

পরে ঋতু এ বিষয়ে সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে স্ট‌্যাটাস দিলে এগিয়ে আসেন প্রবাসী তন্ময় শেখ রাজন নামের এক তরুণ। পরবর্তী সময়ে আলমগীরনগর এবং লায়ন ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবও সাহায‌্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বিদ্যা নীড়ে ১৮০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়ালেখা করছে। তারা চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

পড়াশোনার পাশাপাশি এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও জিতছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এসব শিশুকে নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনাও আছে ঋতুর। প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত ও পড়াশোনায় মনোযোগী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিদ‌্যা নীড়ে ‘মানবতার দেয়াল’ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যে কেউ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে যেতে পারেন।

বিদ্যা নীড় সম্পর্কে মৌসুমী ঋতু রাইজিংবিডিকে বলেন, খুবই কষ্টের মাঝে কয়েক বছর পার করে আজ বিদ্যা নীড়কে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি। এ ব্যাপারে অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন এবং এখনো করছেন। প্রথমে জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলাম। তখন কিশোরগঞ্জের মেয়র মাহমুদ পারভেজ এগিয়ে আসেন। তিনি সাময়িকভাবে নগর মাতৃসদনের নিচতলায় শিশুদের পাঠদানের সুযোগ করে দেন। কিছু দিন পর নগর মাতৃসদনের কার্যক্রম শুরু হলে তা ছাড়তে হয়। পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল গণি ঢালী লিমন ভাই পাগলা মসজিদ সংলগ্ন নরসুন্দা নদীর পাড়ে বিদ্যা নীড়ের নতুন জায়গা করে দেন। বর্তমানে সেখানেই পাঠদান চলছে। এ কাজে আমার প্রবাসী স্বামী, বাবা-মা, শ্বশুড়বাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবকে সব সময় পাশে পেয়েছি।

তিনি বলেন, এখন বিদ্যা নীড়কে পরিপূর্ণ বিদ্যালয়ে পরিণত করা আমার মূল লক্ষ্য। যেন বিদ্যা নীড়ের বাচ্চারা এখান থেকে পড়া শেষ করে অন্য স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়। বিদ্যা নীড়ের নামে এদের সার্টিফিকেট দেয়া যেতে পারে।

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে সরকারের পাশাপাশি সমাজহিতৈষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশা মৌসুমী ঋতুর।


কিশোরগঞ্জ/রুমন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়