ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মেহেরপুরে তামাক চাষ কমছে না

মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেহেরপুরে তামাক চাষ কমছে না

জমির জন‌্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ার পরও প্রতি বছরই বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তামাক চাষ করে যাচ্ছেন মেহেরপুরের চাষীরা।

তবে কৃষি বিভাগ তামাক চাষ কমবে বলে আশাবাদী।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছর মেহেরপুর সদরে ৪৭৫ হেক্টর, মুজিবনগরে ১৭০ হেক্টর ও গাংনী অঞ্চলে ১৪শত হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এবছর জেলায় আরো একশত একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ক্ষেত থেকে তামাক উঠানো শুরু হচ্ছে। এ জেলায় সবজি চাষ ও অন্যান্য শষ‌্যের চাষ হওয়ার কারণেই তামাক লাগানোর জমি প্রস্তুত করা হয় দেরিতে। তামাক কোম্পানিগুলো শর্ত সাপেক্ষে সার ও কীটনাশক প্রদানসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে থাকে। সেজন‌্য চাষীরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েন বলে জানিয়েছেন কোম্পানির নিবন্ধনভুক্ত চাষীরা।

তামাক চাষী সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম এ বছরও ৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, গম-মশুরী বা অন্যান্য ফসল আবাদ করে লাভবান হওয়া যাচ্ছেনা। দাম কম হওয়ায় আবাদের খরচ পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দূযোর্গ তো রয়েছে। এদিকে তামাক চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও বিক্রি দাম বেশি হবে এবং কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী তারা উৎপাদিত পন্য ক্রয় করবে।

জেলার গাংনী উপজেলার ভোমরদহ, কাজীপুর, ধানখোলা, মটমুড়া, বামুন্দি ও ষোলটাকা ইউনিয়নে বেশি তামাক চাষ হয়।

ভোমরদহ গ্রামের চাষী রেজাউল হক বলেন, গত বছর চাষ করেছি, এবারও করবো। তামাক কোম্পানি কিছুদিন আগে আমাদের বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করেছে। জমি প্রস্তুত করার জন্য এখন রাসায়নিক সার (এসওপি) ও একর প্রতি নগদ ৪ হাজার ২ শত টাকা থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা দিচ্ছে। কোম্পানির দেয়া শর্ত মেনে নিয়ে আমি সার ও কীটনাশক পেয়েছি। তাই তামাক চাষ করছি।

সরেজমিনে মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার মাঠ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, চাষীরা তামাকের ক্ষেতে কাজ করছে। আবার কোথাও কোথাও তামাক শুকানোর কাজে অনেকেই ব্যস্ত রয়েছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বিকল্প ফসল আবাদ করার পরামর্শ দিলেও চাষীরা তা মানতে নারাজ।

মেহেরপুর জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বেসরকারী সংগঠন আশ্রয় সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক এমএ হাসান সুমন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তামাক কোম্পানির প্রলোভনে চাষীরা এখন বোকার মতো চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। কোম্পানির দেওয়া রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ দেওয়া সরকারিভাবে বন্ধ করতে হবে।

মেহেরপুর জেলা তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা রফিকুল আলম জানান, তামাক চাষ শুধু ক্ষতিকরই না; যে জমিতে তামাক চাষ করা হয় সে জমির উর্বরতা ধ্বংস হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান জানান, তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তামাক পাতা শুকাতে ধানের বিচালী ব্যবহার করা হয়। ফলে গবাদীপশুর খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। চাষের সময় তামার পাতা নাড়াচাড়া করার কারণে স্বাস্থ্যগতভাবে ক্ষতির শিকার হন চাষীরা।

তিনি আরও বলেন, তামাক চাষ কমাতে আমরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম ও ভূট্টা চাষের জন্য প্রলুব্ধ করি এবং এসব ফসলের জন্য সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে এবার তামাক চাষ কমবে। বাড়বে তুলা, ভূট্টা, গম ও শীতকালীন সবজির চাষ। সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে এক সময় তামাক চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।


মেহেরপুর/মহাসিন আলী/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়