‘আরডিসি নাজিমের কাজই মানুষকে হয়রানি-নির্যাতন’
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসা থেকে ধরে এনে নির্যাতন ও কারাদণ্ড দেওয়া কুড়িগ্রামের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী সচিব, রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভুক্তভোগী কয়েকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মধ্যরাতে বাসা থেকে তাদের তুলে এনে নির্যাতন করা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাদের পরিবারের সদস্যদেরও মারধর করা হয়।
নাজিম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। এর আগে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। সেসময় তিনি কক্সবাজার শহর কলাতলীর মোহাম্মদ আলী ওরফে নকু মাঝিকে (৬২) নির্যাতন করেন। সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়।
গত শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতন করেন নাজিম উদ্দিন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করার পাশাপাশি ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেন।
জামিনের পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং বাসা থেকে টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর এনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।
‘‘আমাকে বার বার বলছিলেন, কলেমা পড়ে নে। আরডিসি নিজে আমাকে মারধর করেন। বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়।’’
এরপর সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষাপটে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরসিডি নাজিম উদ্দিনসহ চার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের পঞ্চায়েত পাড়ার কৃষক খালেকুজ্জামানকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। মধ্যরাতে কার্যালয়ের নিচের তলায় একটি রুমে বসে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেকুজ্জামান বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
খালেকুজ্জামান জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে হঠাৎ করে তার বাড়ির দরজায় লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তাকে ঘর থেকে বের করে আনেন। বাইরে নিয়ে আসার পর আরডিসি নাজিম উদ্দিন তাকে গ্রেপ্তার করতে হুকুম দেন।
‘‘এরপর দুইজন বিজিবি সদস্য আমার দুই হাত দুই দিকে ধরে গাড়িতে তোলে। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর আমাকে বলে- ‘তোমার কাছে দুই লাখ টাকা আছে? টাকা থাকলে দাও, ছেড়ে দিয়ে চলে যাই।’ তখন আমার টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই বলে জানাই।’’
খালেকুজ্জামানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তার পরিবারের সদস্যদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেন তার স্ত্রী, নাতিসহ পরিবারের সদস্যরা।
কিছু দিন আগে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের একটি জলমহাল ইজারার ঘটনায় মৎস্যজীবী বিশ্বনাথকে মধ্যরাতে বাড়িতে থেকে ধরে এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আদালত। বিশ্বনাথ এখন কারাগারে রয়েছেন। এখনো পর্যন্ত মামলার নথি হাতে পায়নি বিশ্বনাথের পরিবার।
কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে এসে নির্যাতিত বিশ্বনাথের স্ত্রী পারো বালা দাস বলেন, তার স্বামীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মারধর করে কারাগারে দিয়েছেন।
‘‘তখন আমার ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছেন এই ম্যাজিস্ট্রেট। আমাকে গালি দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেছেন। আমাকে বুট জুতা দিয়ে লাথি মারেন।’’
ভিতরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে এভাবে হয়রানি করেছেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। এ সব ঘটনার সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, অনেক ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত থেকে আরডিসি স্যারের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে কষ্ট পেলেও তাদের বলার কিছু থাকতো না।
বাদশা/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন