ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিকল্প পথ খুঁজছেন যশোরের পোল্ট্রি খামারিরা

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিকল্প পথ খুঁজছেন যশোরের পোল্ট্রি খামারিরা

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি শিল্পে। দ্রুত হ্যাচারি থেকে খামারে স্থান্তারিত করতে না পারায় মারা যাচ্ছে অনেক মুরগির বাচ্চা। এতে বেশ ক্ষতিতে পড়েতে হচ্ছে। তাই আয়ের বিকল্প পথ খুঁজছেন যশোরের পোল্ট্রি খামারিরা।

জেলার হ্যাচারি মালিকরা বলছেন ৩২ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতিটি বাচ্চা ফ্রি দিলেও খামারিরা নিতে চাচ্ছেন না। আবার স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। একইসঙ্গে পোল্ট্রি শিল্পের খামারিরা ও ফিড উৎপাদনকারীরাও লোকসানের বোঝা বইছেন। সম্ভাবনাময় এ শিল্প বন্ধের আশঙ্কায় রয়েছেন এ খাতে জড়িত এক হাজার খামারের পাঁচ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার।

যশোরাঞ্চলে আফিল হ্যাচারি, কাজী হ্যাচারিসহ ছোটবড় পাঁচটি হ্যাচারিতে প্রতিদিন ৪ লাখ বাচ্চা উৎপাদিত হচ্ছে। করোনার প্রভাবে হ্যাচারি থেকে খামারিরা এক প্রকার বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যশোরের সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড। প্রতিদিন এক লাখের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। 

এ ফার্মের টেকনিক্যাল ম্যানেজার তোফায়েল আহমেদ জানান, ডিম পাড়ানোর চার মাস পূর্বে একটি মুরগি প্রস্তুত করা হয়। এ মুরগি টানা দেড় বছর ডিম দেয়। প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ২১ দিনের ডিম ইনকিউবেটর মেশিনে চাপাতে হয়। একদিনের বাচ্চা বিক্রি করা হয়। বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আবার উৎপাদন প্রক্রিয়া একবার বন্ধ করলে পুনরায় চালু করা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে হ্যাচারি একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানটি শত শত কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে।

জেলায় পোল্ট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় বিপণন কোম্পানি তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) খন্দকার ইদ্রিস হাসান জানান, একদিন বয়সি প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৩২ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক টাকারও কম। তাও আবার ক্রেতা খুঁজে আনতে হচ্ছে। শুধু বাচ্চা নয় লেয়ার মুরগির ডিম ও পোল্ট্রি ফিডেও এর প্রভাব পড়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে যশোরাঞ্চলে আফিল, কাজী, চিফ, প্রভিটা ও প্যারাগনের ফিড মিল রয়েছে। এসব মিলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টন ফিড উৎপাদিত হয়। চাহিদা কমে যাওয়ায় ফিডের বিক্রিও কমে গেছে।

তামিম মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের উপব্যবস্থাপক আব্দুল মুকিত জানান, যশোরাঞ্চলের এক হাজার খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ১১ লাখ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে শুধু আফিল ফার্ম খেকে উৎপাদিত হয় দিনে ২৫ হাজার কেজি। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। বর্তমানে বাজার পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের বাজারও পড়তির দিকে বলে জানান তিনি। যশোরাঞ্চলে প্রতিদিন ৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে আফিল ফার্ম উৎপাদন করে ৪ লাখ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে সাত টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে পোল্ট্রি মুরগির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা পোল্ট্রি কেনা থেকে বিরত থাকছেন। যার কারণে খামারিরা উৎপাদিত মুরগির সঠিক দাম পাচ্ছেন না। ছোট ছোট খামারিরা ইতিমধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। উপায় না পেয়ে আয়ের বিকল্প পথ খুঁজছেন তারা। বড় ব্যবসায়ীরাও উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

লোকসানের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছেন বলে জানান আফিল এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মাহাবুব আলম লাবলু। তিনি এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। 

খুলনা বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম মোল্লা জানান, করোনার প্রভাবে যশোরাঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পে আঘাত পড়েছে বলে জানতে পেরেছি।

তার দাবি, পোল্ট্রির মাংস ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি নেই, বরং উপকার আছে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লোক পোল্ট্রির মাংস নিয়ে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি সবাইকে দুধ, ডিম, মাছ মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।


যশোর/রিটন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়