ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদের আমেজে গ্রামবাসী: করোনা ঝুঁকির শঙ্কা

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ২৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদের আমেজে গ্রামবাসী: করোনা ঝুঁকির শঙ্কা

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের কড়া নির্দেশনা দেওয়ার পরও এর কোন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নির্দেশনা উপেক্ষা করে লক্ষ্মীপুরের গ্রামগঞ্জে দোকানপাটকে কেন্দ্র করে জনসমাগম হচ্ছে, যেন ঈদ এসে গেছে।

এদিকে সরকার ছুটি ঘোষণার পর অফিস-আদালত এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানা বন্ধের কারণে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে স্থানীয়রা বাড়ি ফিরেছে। এতে পাড়ামহল্লায় বাড়ছে লোকসমাগম। সকালে বাজার ও দোকানগুলোতে লোকজন কিছুটা কম হলেও বিকেলে মেলে ঈদের আমেজ। দোকানের অর্ধেক সাটার খোলা রেখে ও প্রশাসনের টহলের খবর রেখে কৌশলে ব্যবসা চলছে। জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাইকিং, তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করলেও কমছে না জনসমাগম।

সমাজকর্মী রিয়াদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন ছুটি পাওয়ায় শহর ছেড়ে গ্রামে এসেছেন মানুষ। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন। যদিও নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকার জন্য ছুটি দিয়েছে সরকার। সেটি না করে অনায়াসে রাস্তায় ঘুরাফেরা, হাট-বাজার ও চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। তার মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন লোকসমাগমে থাকলে তা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য শহরঞ্চলের পাশাপাশি প্রশাসনের গ্রামে নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন রিয়াদ।

চা দোকানই পরিবারের উপার্জনের একমাত্র সম্বল। এটি খোলা থাকলে চুলায় আগুন জ্বলে, অন্যথায় না। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী এমনটি বলেছেন। তবে অনেকেই আবার পাশের দোকান খোলা থাকায় তিনিও বন্ধ রাখেননি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই একটি ছাড়া করোনা সচেতনতায় সরকারের দেওয়া সবগুলো নির্দেশনা পালন করছেন তারা।

আড্ডায় মশুগুল অনেকে  বলছেন, বাড়িতে বন্দি থাকতে ভালো লাগে না। এজন্য সময় কাটাতে ও চা খেতে বাড়ির বাইরে আসছেন। কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন পর গ্রামের আসায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছেন। তারাও বলছেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে প্রশাসনের আদেশ মানা উচিত।

জেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সদস্য ও বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন মুন্সি বলেন, সবগুলো ইউনিয়নে সচেতনতার জন্য মাইকিং, লিফলেট, মাস্ক ও হ্যান্ডওয়াশ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। অপ্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাফেরা, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ফার্মেসী ব্যতিত অন্য দোকানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়েছেন। তবুও ব্যবসায়ীরা আগের মতোই দোকান চালাচ্ছেন। বাধা দিতে গিয়ে কয়েকটি স্থানে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা দোকানিদের হাতে অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, করোনা একটি ছোঁয়াছে রোগ। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে মহামারির আকার ধারণ করেছে এটি। ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সকলের উচিত জনসমাগম এড়িয়ে চলা, প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলো মেনে চলা। তবে শহরের তুলনায় গ্রামের রাস্তাঘাটে ও হাট-বাজারগুলোতে লোকসমাগম প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নজরদারি না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন সুজন সভাপতি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, মানুষ সচেতন হলেই জনসমাগম ও অপ্রয়োজনে চলাচল বন্ধ করা সম্ভব। তা না হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষে এটি রোধ করা কষ্টকর। তবুও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। সার্বক্ষনিক সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে।


লক্ষ্মীপুর/ফরহাদ  হোসেন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়