ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সূর্যমুখীর মাঠে এক বিকেল

সাইফুল্লাহ হাাসন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ৩০ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 সূর্যমুখীর মাঠে এক বিকেল

সূর্য যেদিকে ঘোরে ফুলও সেদিকে যায়। তাই এর নাম সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে তাক করে শুধু হাসতে থাকে। সবুজের ভেতর হলুদের সমারোহ। চারিদিকে হলুদবর্ণ ধারণ করে প্রকৃতিকে করেছে আরও লাবণ্যময়। যা দেখে চোখ ফেরাতে মন চায় না। মনকাডা সৌন্দর্যের এ ফুল আসলে চাষ হয় একটি ফসল হিসেবে। তারপরও ফুলের রূপ এবং কদর কোনোটারই যেন কমতি নেই। চৈত্রের এক বিকেলে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকার একটি সূর্যমুখী বাগানে।

সাংবাদিকতা পেশার পাশাপশি সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু গ্রামে ২৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন  সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন ও এস এম উমেদ আলী নামে দুই ভাই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এবছর সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ৫৮ হেক্টর জমিতে। দুটি ভেরাইটি হাইসান-৩৩ ও হাইসান-৩৬ হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় এ সূর্যমুখীর চাষ। গত বছর যেখানে পুরো জেলাজুড়ে চাষ হয়েছিল মাত্র ১১ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এবছর তার ৫ গুণের চেয়ে বেশি জায়গায় চাষ হয়েছে।

কথা হয় সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান তোলার পর জমিগুলো পতিত থাকত। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমরা এবছর প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করেছি। আমাদের এ সূর্যমুখীর চাষ অনেক মানুষ দেখতে আসছে। দেখে তারা উৎসাহ বোধ করছে এবং বলছে আগামীবছর তারাও করবে।

তার মতে, বাজারে যে ভোজ্যতেল পাওয়া যায় সেটি মানসম্মত নয়। সূর্যমুখীর তেল অনেক ভালো। আমাদের যা প্রয়োজন তা রেখে অতিরিক্ত বীজ বাজারে বিক্রি করে দেব।

এস এম উমেদ আলী বলেন, এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ১ম দফা আমরা ১৭ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। পরে আমরা আরও ৮ বিঘা জমি বাড়িয়ে মোট ২৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।

তিনি বলেন, এটি কোলস্টেরল মুক্ত। সূর্যমুখী দিয়ে উন্নত মানের তেল হয়। আমাদের বাগানে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসে। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এটি চাষের জন্য। তারা আমাদের এবং কৃষি অধিদপ্তরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এভাবেই যদি সবাই পতিত জমিগুলোতে কমবেশী সূর্যমুখী চাষ করেন তাহলে আমদানি নির্ভর সয়াবিন তেল অনেকটা কমে আসবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ফসলের অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যাবে। ভালো ফলন হবে আশাকরি। প্রতি হেক্টরে ২.৪ টন বা প্রতি বিঘায় ৮ মণ সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যাবে। এতে স্থানীয় চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে। এই বীজ কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে। বিক্রি করার ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশে মোট ভোজ্য তেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। এর মূল্য ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমরা সয়াবিন নির্ভর। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব তেল সরিষা এবং সূর্যমুখী এই দুটিকে লক্ষ্য করে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কর্মসূচি নিয়েছি। আগামীবছর মৌলভীবাজার জেলায় আরো বেশী পরিমাণে সূর্যমুখী চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।

তিনি বলেন, কৃষক ভাইয়েরা খুবই অনুপ্রাণিত এবং তারা উৎসাহবোধ করছে। অনেকেই বলছে আগামী বছর তারা আরও বেশী জায়গায় এই সূর্যমুখী ও সরিষা চাষ করবে।



মৌলভীবাজার/সাইফুল্লাহ/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়