ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নরসিংদীতে সবজি বাজারে ধস, বিপাকে কৃষক

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নরসিংদীতে সবজি বাজারে ধস, বিপাকে কৃষক

বেলাব উপজেলার বারৈচা বাজারের দৃশ‌্য

করোনার প্রভাবে নরসিংদীর পাইকারি সবজি বাজারগুলোতে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। সংরক্ষণের উপায় না থাকায় তাই বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

করোনা আতঙ্কে বাজারে পাইকারের অনুপস্থিতি ও পরিবহন সঙ্কটের কারণে দেশের অন্যতম সবজি অধ্যুষিত এলাকা নরসিংদীর সবজিচাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে না পেরে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।

কৃষকরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবকিছুতেই স্থবিরতা বিরাজ করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার আসছে না নরসিংদীতে। অথচ তাদের পদচারণায় সবসময় মুখর থাকতো পাইকার বাজারগুলো। একই সাথে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় চাষিরা নিজেরাও উৎপাদিত সবজি দূরে কোথাও নিয়ে বেচতে পারছেন না। এ কারণে সবজি চাষের খরচ তো উঠছেই না, বরং ভ্যান ভাড়া ওঠানোই দায় হয়ে পড়েছে।

নরসিংদীর শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলা সবজি চাষের জন‌্য বিখ‌্যাত। এ তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত চাষি সবজি আবাদের সঙ্গে জড়িত।

তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা সবজির পাইকারি বাজার বারৈচা, নারায়ণপুর বাজার, জংলি শিবপুর, মরজাল বাজার, শিবপুর ও পালপাড়া বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজারে।।

মহাসড়কের পাশে এসব বাজার গড়ে ওঠায় ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা সহজে যাতায়াতের সুবিধা পান। সবজি কিনতেও তাই স্বাচ্ছন্দ‌্য বোধ করেন।

সপ্তাহের তিন দিন সোমবার, বুধবার ও শুক্রবারে এসব স্থানে হাট বসে। পাইকাররা এসব হাট তেকে সবজি সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। এ এলাকার উৎপাদিত সবজিই রাজধানীসহ দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ সবজির চাহিদা মেটায়।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সবজির বড় পাইকার আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই দাম কমে গেছে বেগুন, শিম, টমেটোসহ নানা সবজির।

অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে শ্রমিক খরচসহ ভ্যান ভাড়াও দিতে পারছেন না। অনেকে রাগে-দুঃখে সবজির ক্ষেতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে জমির ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিন বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়- আশপাশের গ্রামগুলো থেকে ভ্যান বোঝাই করে শিম, বেগুন, কুমড়া, লাল শাক, ধনিয়া, শসাসহ বিভিন্ন সবজি নিয়ে আসছেন কৃষকরা।

বাজারে প্রচুর সবজি, তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে। অথচ এসব বাজারে পাইকারের সমাগমে পা ফেলা দায় থাকত।

এসব বাজারে এখন বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা মণ, শিম ২২০ টাকা মণ, শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা মণ। এছাড়া ডাঁটা, লাউ, কুমড়ার বাজারদর একবারে কম।

বাজারে অনেক স্থানে দেখা গেছে, বিক্রি করতে না পেরে কৃষকরা ডাঁটা ও বেগুন ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

বেলাব উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের কৃষক জাকারিয়া সকাল ৮টায় বারৈচা বাজারে বেগুন নিয়ে আসেন। অথচ সকাল গড়িয়ে দুপুর ১২টা বেজে গেলেও কেউ বেগুনের দাম পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করেনি বলে আক্ষেপ করেন।

রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক রজব আলী বেগুন ও শিম নিয়ে এসেছেন হাটে। তিনি বলেন, ‘বেগুন ১০০ টাকা ও শিম ২২০ টাকা মণ দাম উঠেছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও বেগুন বিক্রি করেছি ৭০০ ও শিম বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা মণ দরে।’

পাইকারি সবজি বিক্রেতা রইছ মিয়া। বারৈচা ও নারায়ণপুর বাজার থেকে সবজি কিনে চট্টগ্রাম ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, ‘পরিবহন না পাওয়ায় এবং সবজির দাম কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছি। বড়সড় লোকসান দিয়ে এখন আমি সবজির ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে আবার ব্যবসা শুরু করব।’

পাইকার মোসলেহ উদ্দীন বলেন, ‘দেড়শ’ টাকা মণ দরে বেগুন কিনেছি। কিন্তু পরিবহন পাচ্ছি না। কীভাবে এ বেগুন ঢাকায় নেব, সেই চিন্তায় আছি।’

শিবপুর উপজেলার সবজি বিক্রিতা কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাঁচার আর কোনো আশা নেই। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। একটা হিমাগার থাকলেও কিছুটা রক্ষা পেতাম।’

বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজিমউর রউফ খান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারিভাবে দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের জন্য এরকম ঘোষণা এখনও আসেনি। তাই তারা কোনো সাহয‌্যও পাচ্ছেন না।’

করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে সবজির বাজার আবার ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


হানিফ মাহমুদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়