ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নুসরাতের গায়ে আগুনের এক বছর পূর্ণ

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নুসরাতের গায়ে আগুনের এক বছর পূর্ণ

বাংলাদেশে স্মরণকালের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ফেনী জেলার সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের লালসার শিকার হয়ে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় নুসরাতকে।

গত বছরের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ শে মার্চ নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপিড়নের শিকার হন রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদি হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাফি ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে। ২০১৯ সালের ৩রা এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেয়।

এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন।

রায়ে সেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত  অন্য আসামিরা হলেন- নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

গত ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার সব ধরনের কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ধরে কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার সব নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি কাছে উপস্থাপন করা হয়। আপিল বিভাগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার পর খুব দ্রুত সময়ে পেপারবুক তৈরি হয়েছে। আশা করছি, করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ ও সাধারণ ছুটি শেষ হলে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির কাজও শুরু হয়ে যাবে। মামলাটির নিষ্পত্তির বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং সব আসামির ফাঁসি কার্যকর হবে।

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি চেয়েছেন বলেই এত দ্রুত সময়ে আমারা নিম্ন আদালত থেকে সুবিচার পেয়েছি। আদালত সব আসামিকে ফাঁসি দিয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি মামলাটি উচ্চ আদালত থেকে নিষ্পত্তির বিষয়েও সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আশা করি, সেখানেও আমরা সুবিচার পাবো, সব আসামির ফাঁসি কার্যকর হবে।'

নুসরাতের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের এক বছর পরও তাদের বাড়িতে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরেনি। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ সদস্য পাহারায় রয়েছেন।

নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপীল করেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।'

 

ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়