ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফিরিয়ে দিলো মাতৃসদন, রাস্তায় সন্তান প্রসব

সিদ্দিক আলম দয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফিরিয়ে দিলো মাতৃসদন, রাস্তায় সন্তান প্রসব

করোনা আতঙ্কের কারণে গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় অন্তঃসত্ত্বা মিষ্টি আকতারকে (২০)। পরিবারের মিনতিকে পাত্তা না দিয়ে মাতৃসদন থেকে এক প্রকার বের করে দেওয়া হয় তাকে।

উপায় না পেয়ে তাকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিল পরিবারের সদস‌্যরা। মাত্র ২০০ গজ দূরে যাওয়ামাত্রই প্রসব বেদনা ওঠে মিষ্টি আকতারের। পরে রাস্তার মধ‌্যেই একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

সোমবার (৬ এপ্রিল) রাত পৌনে ৮টায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে মধ্যপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

মিষ্টি আকতার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে আব্দুর রশিদের স্ত্রী।

মিষ্টি আকতারের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা উঠলে দ্রুত তাকে গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন আব্দুর রশিদ। একটি অটো বাইকে করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে পৌঁছান তারা।

সেখানে দায়িত্বরত কর্মী তৌহিদা বেগম কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই মিষ্টি আকতারকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তৌহিদা বেগম তাতে কর্ণপাত করেননি।

পরে নিরুপায় হয়ে প্রসূতিকে অন্যত্র নেওয়ার প্রস্তুতি নেয় পরিবার। তাদের বহনকারী ইজি বাইকটি কিছুদূর এগোলেই ব্যাথায় চিৎকার শুরু করেন মিষ্টি আকতার। সে সময় ইজি বাইকের মধ‌্যেই একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি।

পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। সন্তান প্রসবের পর মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ ঘটনায় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ঘেরাও করেন। পরে বাধ্য হয়ে মাতৃসদন কর্তৃপক্ষ প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা দেন। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনেই ভালো আছেন বলে জানা গেছে।

ওই এলাকার সমাজসেবক ওয়াজিউর রহমান র‌্যাফেল বলেন, ‘মাতৃসদনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটান। তারা রোগী না দেখেই ফিরিয়ে দেন। রোগীদের ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’

গাইবান্ধা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদ আহমেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং মা ও শিশুকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদানের আহ্বান জানান।

শহিদ আহমেদ বলেন, ‘করোনা আতঙ্কে যদি কোনো কর্মচারি রোগীদের সাথে এ ধরনের আচরণ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। নবজাতক ও তার মাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মাতৃসদন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. সেকেন্দার আলী বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


দয়াল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়