ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমার মতো কফাল পুড়া আর কেহ নাই’

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 ‘আমার মতো কফাল পুড়া আর কেহ নাই’

‘আমার মতো কফাল পুড়া মনে হয় আর কেহ নাই। ৪৫ বছর আগে ৫/৬ মাস বয়স হবার পর ছয়াল মাইয়্যা দুইডা মইরা গেল। সেই শোকে আমার স্বামী ৪০ বছর আগে মইরা গেল।

এরপর থ্যইক্যা পরে বাড়িতে কাজ কইরা কোন রকম খাওন জুটাইতাম। কিন্তু দ্যাশে কি করোনা আইলো এখন আর কেউ কাজে লইতে চায় না। হবখানে ত্রাণ দিলেও ঘুইরা ঘুইরা তাও কফালে জুটলো না। তিন দিন ধইরা উনুন (চুল) জ্বলে না। বাড়ির পাশের লোকজন বাসি পান্তা যা দেয় তাই দিয়ে এক বেলা চালাই লই।’

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী মধ্যপাড়া গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা আমেনা বেগম এভাবেই কষ্টের কথাগুলো বলছিলেন আর মনের অযান্তেই দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল তার।

স্বামীর রেখে যাওয়া এক টুকরা জমির ওপর তোলা ছাপড়া ঘরে বাস করেন আমেনা বেগম। বৃষ্টি বাদলে সেই ছাউনি বেয়ে পানি পড়ে। এতো বড় পৃথিবীতে তার আত্নীয়-স্বজন বলতে আর কেউ নেই। বয়সের ভারে শরীরও ন্যুয়ে পড়েছে। তার ওপর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে গিয়ে একটা পা-ও ভেঙে গেছে।

সেই ভাঙা পা নিয়েই কোন রকমে মানুষের বাসায় কাজ করে নিজের জন্য দুবেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি। বেশি বয়স আর সেই সঙ্গে ভাঙা পা নিয়ে তেমন কাজ করতে পারেন না বলে বাসা বাড়িতে তাকে কাজেও নিতে চান না অনেকে। তাও তার দিন চলে যাচ্ছিল কিন্তু মহামারি করোনা আসাতে এখন আর তাকে কেউ কাজে নিচ্ছেন না বলে জানান আমেনা বেগম।

এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এমনিতে ঘরে খাবার থাকে না। তারপর করোনা কিভাবে খাবার জুটবো তা জানেন না? যার ঘরে কামাইসুদ (রোজগার করার লোক) নাই তার কফালে আবার খাবার জুটবে কিভাবে? মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করতে গিয়ে পাটাও ভেঙে গেছে। আল্লাহ উপরে নিয়া যাইতো তাইলে আমার ছেলে মেয়ে খালি পেটে থাকতে দিতো না।’

বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পেয়েছেন কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে আমেনা বলেন, ‘ভোটর কার্ডে বয়স আটান্ন কইরা থুইছে। স্যারগে কাছ গেলে কয় আরো ৪ বছর পর ছাড়া হইব না। তাই খালি হাতেই বাসায় ফিইরা আসি।’

প্রতিবেশী রীনা বেগম ও মো. ইয়াছিন জানান, সন্তান, স্বামী হারানোর বিভিন্ন সময় পরের বাড়িতে কাজ করে দু বেলা, এক বেলা খেয়ে দিন কাটে তার। এছাড়া, প্রতিবেশীরা যা দেয় তা দিয়েই কোন রকমে চলে তার। করোনার কারণে এখন আর তাকে কেউ কাজে নিতে চায় না। কোনো উপায় না পেয়ে ত্রাণের চালের জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেও নাম না থাকায় কোন সাহায্য পাননি তিনি। তাই তিন দিন ধরে চুলাও জ্বলেনি। 

এসময় তারা আমেনা বেগমকে সাহায্য করার জন্য সকলের কাছে দাবি জানান।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাকিব হোসেন তরফদার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার মাধমে জানলাম। টুঙ্গিপাড়ায় ১২ হাজার গরীব ও অসহায় মানুষের নামের তালিকা করা হলেও অনুদান পেয়েছি মাত্র তিন হাজার লোকের। তারপরেও আমার পক্ষ থেকে তাকে দ্রুত অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করবো।’


গোপালগঞ্জ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়