ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাসি ফুটলো বৃদ্ধা তাহেরা বেগমের মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাসি ফুটলো বৃদ্ধা তাহেরা বেগমের মুখে

বৃদ্ধা তাহেরা বেগমের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন দু’ ম্যাজিস্ট্রেট

প্যারালাইজড হয়ে তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী লেদ মেশিনের মিস্ত্রী আবদুল গফফার।

বৃদ্ধা স্ত্রী তাহেরা বেগমও অসুস্থ। ষাটোর্ধ্ব দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসার চলে ছেলের পাঠানো অর্থে।

কিন্তু ছেলের পরিবারেও এখন সংকট। এ কারণে মার্চের শেষেই ঘরের চাল-ডাল শেষ হয়ে যায় তাদের। ফলে অনেকটা উপবাস থাকার উপক্রম হয় দু’ সদস্যের এ পরিবারটির।

নিম্নবিত্ত পরিবার হলেও কারও কাছে হাত পাতার অভ্যাস নেই তাহেরা বেগমের। তাই কোনো রকম আধপেটা খেয়ে দিন পার করছিলেন এই দম্পত্তি।

বিষয়টি জানতে পেরে এলাকারই এক তরুণ তাহেরা বেগমের কাছে খুলনা জেলা প্রশাসনের ‘হট লাইনের’ নম্বর দিয়ে ফোন করতে বলেন। তার শেখানো মতে তাহেরা বেগম ফোন করে জানালেন, ‘আমাদের ঘরে খাবার নেই’।

ফোন পেয়ে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার আলোর গলিতে তাহেরা বেগমের ঘরে পৌঁছে যান খুলনা জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাকিবুল হাসান ও সেটু কুমার বড়ুয়া। খাদ্যসামগ্রীর বস্তা হাতে পেয়ে অনেকটা আনন্দে কেঁদে ফেললেন তারা।

ওই আলোর গলির আরেক প্রান্তে মেহেরুন নেছার ঘর। ফোন কলের লিস্টে পেশার ঘরে ফাঁকা। ওই বাড়িতে গিয়ে নাম ধরে ডাকতেই বের হয়ে এলেন ষাটোর্ধ্ব আরেক বৃদ্ধা। জানালেন, মেয়েকে নিয়ে তিনিই ওই ঘরে থাকেন। মেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, সেখান থেকে যে খাবার পায় দুই জনের চলে যায়। কিন্তু রোগের ভয়ে মানুষ কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে। সেই থেকে টানাটানি চলছে তাদের সংসারে।

মেহেরুন নেছা জানান, এলাকার একজনের কাছ থেকে নম্বর পেয়ে তিনি নিজেই ফোন করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। খাবার যে সত্যিই আসবে এটা তার বিশ্বাস হয়নি।

শুধু তাহেরা বেগম বা মেহেরুন নেছা নয়; ফোন পেয়ে প্রতিরাতেই এমন শতাধিক মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে খুলনা প্রশাসনের ‘বেসরকারি মানবিক সহায়তা সেল।’ করোনার প্রভাবে আয় বন্ধ হয়ে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো হট লাইন নম্বরে ফোন করে ও এসএমএস করে এই সামগ্রী পাচ্ছেন।

প্রথম দিনে ৩ এপ্রিল রাতে ১৬২টি পরিবার, শনিবার রাতে ৩২৮টি ঘরে, রোববার রাতে ৪৭০টি পরিবারের কাছে এই খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭/৮শ’ মানুষ হট লাইনে ফোন দিয়েছেন সহায়তার জন্য।

সোমবার রাতেও তাদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে, ফোনকলে অতিরিক্ত চাপ এবং অন্যান্য স্থান থেকেও সুবিধাপ্রাপ্তরাও এ ত্রাণে অংশ নেয়ায় কলের পরিবর্তে এখন শুধুমাত্র মেইল ও এসএমএস-এ নাম গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সারাদেশে ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’ সরকারি আহ্বানে সবাই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব কর্মহীন মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য এসেছে। এটা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অর্থাৎ জনপ্রনিধিরা বিতরণ করছেন।

তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত কর্মহীন এই মানুষের জন্যই বেসরকারি সহায়তা সেল খোলা হয়েছে। এর আওতায় ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে ‘ডোর টু ডোর’ খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও খুলনার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিরাতে খাদ্য পৌঁছে দিতে কাজ করছেন।’

জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে খুলনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরীক্ষার পরিদর্শকের সম্মানীবাবদ পাওয়া আড়াই লাখ টাকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর কর্মকর্তারা যে যা পারেন-সহযোগিতা করছেন। পরে বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তি চাল-ডাল, তেল, লবণ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কারও কাছ থেকে নগদ টাকা নেওয়া হচ্ছে না। যে যা পারছেন খাদ্য সামগ্রী কিনে দিচ্ছেন। সেখান থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৭ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম মুসুর ডাল, ১ লিটার তেল, ৫০০ গ্রাম লবণ, ২ কেজি আলু. একটি সাবান ও মাস্ক দেওয়া হচ্ছে।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়