ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আম্ফানে ভেসে গেছে সাড়ে ৪ হাজার মৎস্য ঘের

আলী আকবর টুটুল ও আরিফ সাওন, বাগেরহাট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২২ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফানে ভেসে গেছে সাড়ে ৪ হাজার মৎস্য ঘের

আম্ফানে বাগেরহাটে সাড়ে তিনশতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।  ভেসে গেছে সাড়ে ৪ হাজারের অধিক মাছের ঘের।  নষ্ট হয়েছে ১৭০০ হেক্টর জমির ফসল।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ঝড়ের আগেই উপকূলের অধিকাংশ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম।  কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।  তবে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ঘের ভেসে গেছে।  ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে।  প্রাথমিক নিরূপণে দেখা গেছে, চার হাজার ৩৩৯টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৪৭ টি ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।  ভেসে গেছে সাড়ে ৪ হাজারের অধিক মাছের ঘের।

আম্ফানের প্রভাবে জোয়ারের পানির কারণে ভেসে গেছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অনেক মাছের ঘের।  করোনার এই সময়ে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় বিপাকে চাষীরা।

বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ কনক বলেন, ভেসে যাওয়া মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক একটি হিসাব নিরুপণ করা হয়েছে।  জেলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের ভেসে ২ কোটি ৯০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি মহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, করোনার কারণে মাছের দাম অনেক কম ছিল।  মাছ কেনাবেচা হচ্ছিল না।  অনেকেই মাছ বিক্রি করেননি বা করতে পারেননি। এই সময় ঘের ভেসে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হলেন চাষীরা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের ও অতিবর্ষণে আমনের বীজতলা, পান, সবজি, কলা ও অন্যান্য মিলে প্রাথমিকভাবে ১৭০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।  টাকার হিসাবে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলার রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শরণখোলার সাউথখালী এলাকার বলেশ্বর তীরের বাঁধটি আবার ভেঙেছে। সিডর আইলাসহ ঘূর্ণিঝড় এলেই এই বাঁধটির কারণে ঝূকির মাঝে থাকে উপকূলের ওই এলাকার মানুষ।  বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গাবতলা এলাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারের সময়ও বাঁধের ভাঙা অংশ নিয়ে নতুন করে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।  প্রায় একশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ও গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা।  সবমিলে অন্তত দুই কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। 

বাগেরহাট সদরের ভৈরব ও দড়াটানা নদীর তীরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি স্থানে নদী সংলগ্ন সড়ক ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকছে।  এতে জোয়ারের সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ছে কয়েক হাজার মানুষ।

বাগেরহাট সদরের বেমরতা ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া গ্রামের সুমন হাওলাদার বলেন, রাত ৯ টার দিকে সড়ক ভেঙে গ্রামে পানি প্রবেশ শুরু করে।  এতে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘরে পানি উঠে যায়।  রাত আড়াইটার দিকে আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করে।  এখানকার ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামের অন্তত ৩২০ পরিবার ভোগান্তিতে রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ৮ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোও দ্রুত সংস্কার করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে আম্ফান পরবর্তী সময়ে মোরেলগঞ্জ শরণখোলাসহ জেলার সব উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা এবং ৫০টি পরিবারকে ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে।


সাওন/টুটুল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়