ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘শত কষ্ট হলিও নিজের ঘরে থাকতি চাই’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘শত কষ্ট হলিও নিজের ঘরে থাকতি চাই’

বাঁধের লোনা পানির নীচে অর্ধেক ডুবে আছে নবীজানের ঘর

‘ঝড়ের রাতে অনেক কষ্ট কইরে আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। কিন্তু সেখানে থাকতি মন সায় দেয় না। শুনিচি এক জায়গায় অনেক মানুষ থাকলি করোনা হতি পারে। তাছাড়া, অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বার বার টানা হেচড়া করতি চাই না। তাই শত কষ্ট হলিও নিজের ঘরে থাকতি চাই।’

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবের পরে বাঁধের লোনা পানির নীচে অর্ধেক ডুবে আছে খুলনার কয়রা উপজেলার নবীজানের ঘর। করোনাভাইরাসের ভয়ে তবুও নিজ ঘর ছাড়তে চান না তিনি।  

দিনের বেলা ভাটার সময় পানি নেমে গেলে সেখানেই ঘরে মাচার উপর রান্না করছেন তিনি। রাতের বেলা স্বামী সন্তান নিয়ে ওই মাচানের ওপরেই ঘুমাচ্ছেন। গত চার দিন ধরে নিজের বসতঘরটি আঁকড়ে ধরে আছে এ পরিবার।

নবীজানের মতো খুলনার কয়রা উপজেলায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকর ঘর ঝড়ে উড়ে গেছে। আবার অনেক মানুষের বসতঘর লোনাপানির নীচে অর্ধেক তলিয়ে আছে। এসব পরিবারের বেশিরভাগই ঘরের মধ্যে উঁচু পাটাতন করে সেখানেই বসবাস করছেন।

তারা জানায়, বুধবার (২০ মে) রাতে ঝড় শুরু হলে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিলেন সবাই। পরের দিন সকালে যে যার বাড়িতে চলে এসেছেন। কারণ করোনার ভয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠাসাঠাসি করে ঝড়ের রাতে থাকতে হয়েছে। করোনার ভয়ে সবকিছু উপেক্ষা করে পরদিন সবাই বাড়িতে চলে এসেছেন।

কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, লোনা পানির সঙ্গে এক প্রকার যুদ্ধ করেই টিকে আছে পরিবারগুলো। চারিদিকে জোয়ারের পানি। কিন্তু সে পানি ব্যবহার করা যায় না। পানিতে মরা প্রাণী দেহের উচ্ছিষ্ট ভাসতে দেখা গেছে। নারীরা সারা দিন ওই পানি ঠেলে ঘর গৃহস্থলি সামলাচ্ছেন। আর পুরুষরা খাবার সন্ধানে বাইরে যাচ্ছেন। গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা দেখে দিয়ছে। যেসব গ্রাম এখন প্লাবিত হয়নি সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে খাবার পানি। এতে  কষ্ট বেড়েছে।

দশহালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, ঝড়ের রাতে অনেকরই চাল ডাল ভেসে গেছে। আধপেটা খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে এখন অনেকের।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বাঁধ ভেঙে বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করা পানি এখনও জমে আছে। ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা, গোলখালি, আংটিহারা, জোড়শিং ও চরামুখা গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় শুন্য ভিটায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও কেউ রাজি হয় না বলে জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী শামসুর রহমান।

গাজী শামসুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের ভয় কেটে গেলেও করোনার ভয় যাচ্ছে না। তাদেরকে অনেক বুঝিয়েও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

চরামুখা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জন্মের পর থেকে ঝড় ও লোনা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা টিকে আছি। কিন্তু অজানা রোগে পড়লে তখন তো বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে। তাই ভেবে দেখলাম, একটু কষ্ট হলেও নিজের বাড়িতেই থাকি।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, ‘স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ মুহুর্তে যাদের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে তাদেরকে বুঝিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে করোনার ভয়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না।’



খুলনা/নূরুজ্জামান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়