ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আম্ফানে সর্বশান্ত মাছচাষি ফরিদুল ও এরশাদ

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৫ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফানে সর্বশান্ত মাছচাষি ফরিদুল ও এরশাদ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে টানা বৃষ্টি আর জলোচ্ছাসে অনেক মাছচাষির স্বপ্নও ভেসে গেছে। ধানক্ষেত আর মাছের পুকুর একাকার হয়েছে পানিতে।

এমনই দু'জন সর্বশান্ত হওয়া মাছ চাষি ফরিদুল ও এরশাদ। আম্ফান তাদের কাছে দুঃস্বপ্নেরই মতো।

ফরিদুল ইসলামের বয়স সবে ৩৫। ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী। সংসারে সচ্ছলতা আনতে পেশা পরিবর্তন করে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।

২০১৩ সালে তিনি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তরুণ উদ্যোক্তা এরশাদ নামের আরেক মাছচাষির সাথে মিলে দুজনে বর্গায় মাছ চাষ করছেন। এবছর তাদের পুকুরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০মন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ ছিলো। প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকায় প্রতিবছরই ভালো লাভ হয় তার। তবে এবার আম্ফানের প্রভাবে সর্বনাশ হয়ে গেছে তাদের। ভেসে গেছে তাদের জলাশয়ের মাছ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়ীয়ার এই দুই মাছচাষি ধার-দেনা করে পুকুরে মাছ ছেড়েছিলেন। রোজার পরে বাজারজাত করার আশা ছিলো। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সব আশা ভেসে যায় তাদের।

ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসাবে কাজ করতাম। এর পরে এরশাদের সাথে পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথমে বিঘাপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা হিসাবে ৫ বিঘা পুকুর নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মিশ্র চাষ করি। এতে বেশ ভালো লাভ হয়। এর পরে আর পিছনে তাকাইনি।'

তিনি বলেন, ‘এবছর ১২ বিঘা পুকুর বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিভিক্তিক ও বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করেছি। এরশাদ ও আরো এক জনের সহায়তা নিয়ে তিনজন মিলে মাছ চাষ করেছি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ৯০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। ধার-দেনা করে প্রায় ৩৩ মণ মাছ ফেলেছি পুকুরে। এর মধ্যে ১০ মণ রুই, ২ মণ মৃগেল, ৫ মণ গ্রাসকার্প, ৭ মণ জাপানি (মিনারকার্প), ২ মণ কাতল ও ২ মণ মনোসেক্স তেলাপিয়া। গত বছর ৭৫ হাজার টাকার মাছ ছেড়েছিলাম। মাছ বিক্রি করেছিলাম ২ লাখ টাকারও বেশি। এবছর ৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করবো বলে আশা করেছিলাম।'

এরশাদ বলেন, ‘কচুরিপানা, টোপা পানাসহ পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। এজন্য আমাদের এখানে দ্রুত মাছ বাড়ে। এছাড়া বাড়তি খাবারও দেওয়া লাগে না। এ বছর মাছের বেশ ভালো বৃদ্ধি হয়েছে। চার মাস আগে ছাড়া মাছ বিক্রির উপযোগী হয়েছিল।'

তিনি বলেন, ‘ঝড়ের রাতে মানুষ যখন বাড়িতে, সারারাত আমরা দুজন পুকুরের পাড়ে। চোখের সামনে চারিদিক থেকে পানি এসে পুকুরের পাড় তলিয়ে যায়। ধানক্ষেত, পুকুর সব একাকার হয়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ বের হতে দেখেও কিছুই করার ছিলো না।'

মিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। যদি নির্দেশনা আসে তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের সহযোগিতা করা হবে। আমরা ইতিমধ্যে এলাকা জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ করছি।'

 

কুষ্টিয়া/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়