ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অবরুদ্ধ ঈদোৎসব

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ২৬ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অবরুদ্ধ ঈদোৎসব

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে ছোট-বড় সবারই অনাবিল খুশির এক মোক্ষম ক্ষণ। ধনি-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে বাঙালির ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ বেশ জম্পেসই হয়।

সকাল সকাল নতুন জামা-কাপড় পরে দল বেধে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে নামাজ আদায়। কোলাকুলি করে উৎসবের আমেজ নিয়ে বাড়ি ফেরা। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। ঈদোৎসবে এমনটাই রেওয়াজ।

তবে এবারের ঈদের বেলায় পুরোপুরি অন‌্যরকম ঘটনা ঘটেছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। কোলাকুলি করেননি। দলবেধে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সামাজিকতা হয়নি। এ যেনো এক অবরুদ্ধ ঈদ।

দেশের অন‌্যান‌্য জেলার মতো ময়মনসিংহেও করোনা আতঙ্কে মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে পারেনি। বেশিরভাগ মানুষ নতুন জামাকাপড় কেনেননি। করোনার সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে ঈদগাহ মাঠে না গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ এলাকায় মাসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছে।

বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্কতা জারি করা হয়। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই মাইকিং কর হয়। ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুসঙ্গ কোলাকুলি থেকে বিরত থেকেছেন সবাই।

ময়মনসিংহে শহর কিংবা গ্রামের বৃহৎ ঈদগাহ মাঠগুলো ছিল মুসল্লি বিহীন। অন্যান্য সময়ের ঈদ উৎসবগুলোতে স্বভাবতই সেখানে সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ উৎসবমূখর পরিবেশ থাকে। কোথাও কোথাও ঈদের জামায়াত ঘিরে ঈদগাহ মাঠগুলোতে শিশুদের নানা খেলা নিয়ে অস্থায়ীভাবে ছোটখাট মেলা বসে যেত। এবার তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কোথাও কোথাও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হলেও লোক সংখ্যা ছিল খুবই সিমিত।

নগরীর খাগডহর এলাকার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমার জীবনে এমন নির্জীব ঈদ আর কখনও দেখিনি। এবার উৎসব নয় বরং নিয়ম মানার ঈদ উদযাপিত হলো।’

নগরীর একজন ইমাম মাওলানা আবু সাইদ বলেন, ‘করোনা থেকে রক্ষা পেতে এবং সবাইকে রক্ষা করতে ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নিয়ম মেনে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে। এই সময়ে ঈদের আনন্দ স্বাভাবিকভাবেই সিমিত হয়েছে। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের পাশাপাশি করোনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়েছে।’

প্রায় প্রতিটি মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক ঈদের নামাজের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া রোজার শুরু থেকেই বিপনি বিতানগুলো বন্ধ রাখা হয়। চলতি মাসের ১০ তারিখের পড়ে উপজেলা শহরগুলোতে সিমিত আকারে দোকানপাট খোলার ব্যবস্থা করা হলেও সেখানে ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ঈদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে পারেনি মানুষ। শিশুকিশোররা নতুন পোশাক না পাওয়ায় ঈদের আনন্দ ফিকে গেছে।

ঈদকে ঘিরে বরাবর অর্থনীতির যে প্রাণচাঞ্চল্য অবস্থা থাকে তা এবার ছিল স্তব্ধ। অনেকেই ঈদের পরে পরিবার পরিজন নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চরমভাবে চিন্তিত।

এদিকে করোনার প্রভাবে রাজধানী ঢাকা বা অন্যান্য স্থানে থাকা লোকজন এবার পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়িতে ফিরতে না পারায় ঐসব পরিবারগুলোতে উৎসব ছিল নিরানন্দ। পরিবহন শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক, দোকান কর্মচারীসহ নিত্য আয়ের মানুষদের জন্য এই সময়ের ঈদোৎসব ছিল বড় বেশি ফ‌্যাকাশে। তাদের অনেকের পরিবারেই এবার ঈদ কোনো আনন্দ নিয়ে আসেনি।

দর্জি শ্রমিক আজিম মিয়া হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এমন সময় যেন পৃথিবীতে আর কোনদিন না আসে সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। কাজ না থাকায় এবার তেমন কোনো বাজার সওদা করতে পারিনি। বাচ্চাদের নতুন জামা-কাপড় দিতে পারিনি। সামনে যে কী আছে আল্লাহ জানেন।’

মাংস ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য বছর রোজার ঈদের সময় ৪/৫টি গরু জবাই করি। সব মাংস বিক্রি হয়ে যায়। এবার মাত্র একটি গরু জবাই করেছি। তাও ক্রেতা খুব কম। যারা ৪/৫ কেজি এমনকি ১০ কেজি পর্যন্ত মাংস নিতেন, এবার তারা ১/২ কেজি করে মাংস নিয়েছেন। এমন ঈদ আর কখনও দেখেননি।’

সব মিলিয়ে এবার এক অবরুদ্ধ ঈদ উৎসব পালিত হলো।

 

ময়মনসিংহ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়