ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সিলেটের দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০২, ২৬ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সিলেটের দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সীমান্ত নদী সারি, গোয়াইন এবং পিয়াইনে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটে স্রোতের টানে নিখোঁজ রয়েছেন এক যুবক।

পানিতে সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে জেলা সদরের সাথে গোয়াইঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কসহ একাধিক আঞ্চলিক সড়ক।

এছাড়া, গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৫ গ্রাম এবং জৈন্তাপুরে দুই ইউনিয়নের অসংখ্য বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। আউশ ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একাধিক মৎস খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সারি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সাথে পিয়াইন ও গোয়াইন নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ তিন নদীর দ্রুত পানি বাড়বে। এতে আরো এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি স্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম সরকার জানান, মঙ্গলবার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টায় সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ জানান, উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগান, বাউরভাগ হাওর, আসামপাড়া হাওর, পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দ, তীতকুল্লি, বুধিগাঁও, খাস, দাড়াইল, বাংলাইন ও লাতু হাওর, পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের সাতাইন, পাঁচপাড়া, পুকাশহাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওর এলাকার নিম্নাঞ্চলের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ ছোট-বড় কাঁচা-পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। সারি নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বিকেলে উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে রাস্তার ভাঙা অংশ সাঁতরে পাড় হওয়ার সময় ওসমান আলী (৩৭) নামের এক যুবক স্রোতের টানে নিখোঁজ হয়েছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুস সাকিব একাধিক প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া, বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য দেওয়ার জন্য সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রীও বিতরণ এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, জৈন্তাপুরের সারি নদীর তীরের তিনটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী এম এম রুহেল। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা তার।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার (এসি- ল্যান্ড) ফারুক আহমদ। তিনি জানান, কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শুকনো খাবারসহ জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য রাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে।  উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করবে।

গত রোববার দিবারাত থেকে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায়। পাশাপাশি সীমান্তের ওপারের মেঘালয়েও টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে পাহাড়ি ঢলে এ দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। শিগগির এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

সিলেট/নোমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়