ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উপকূলে মাছধরার সুযোগ চায় ৫০ হাজার জেলে

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
উপকূলে মাছধরার সুযোগ চায় ৫০ হাজার জেলে

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের কাছাকাছিতে মাছ ধরার সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে জেলে সমাজের প্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার (২ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিটি পাঠানো হয়। এসময় উপস্থিতি ছিলেন, টেকনাফ ক্ষুদ্র নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ সদর ইউপি মেম্বার ডা. নূর মোগাম্মদ গণি, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ, নৌকা মালিক ফিরোজ আহম্মদ, বশির আহমদ প্রমুখ।

নৌকা মালিকদের দাব, গভীর সাগরে বড়বড় ট্রলার যোগে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরা বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে যে আইন তৈরি হয়েছে, তা এখন ছোট ডিঙি নৌকার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে টেকনাফের ৫০ হাজার জেলে আর্থিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

স্মারকে বলা হয়, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সরকার গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পযন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সারাদেশের মতো কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফেও তা কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু এতে টেকনাফে দুই হাজার ডিঙি নৌকার অন্তত ৫০ হাজার জেলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব নৌকার জেলেরা গভীর সাগরে গিয়ে মাছ আহরণ করেন না। উপকূলের মাত্র দেড় থেকে দুই কিলোমিটার গিয়ে এসব নৌকাগুলো ছোটমাছ আহরণ করে। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে। নৌকাগুলো দিনের বেলাতেই মাছ ধরে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৬৫ দিনের মাছ ধরার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে টেকনাফের ৫০ হাজার জেলে পরিবারে হাহাকার চলছে। অনেকে পরিবারে একবেলা খাবার যোগাড় হচ্ছে না। মিয়ানমার সিমান্ত উপজেলা, নাফনদী ও সাগর দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, ইয়াবাসহ মাদক পাচারের কারণে আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর থাকায় গত তিন বছর ধরে স্থানীয় জেলেরা নাফনদী ও সাগরে মাছ ধরতে পারছে না। এর উপর ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ জেলে পরিবারে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাই এই বিপর্যয় রোধে ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা সময়ের দাবি।

স্মারকে বলা হয়, প্রতি বছর আশ্বিন মাসের প্রথম তারিখ থেকে ২২ দিন ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এতে জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টেকনাফের জেলেরা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। কিন্তু ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা টেকনাফের জেলেদের জন্য অমানবিক।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, টেকনাফে জেলেরা যে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন-তা আকারে খুবই ছোট। স্থানীয়ভাষায় এই নৌকাকে বলা হয় ‘টাওঙ্গা নৌকা’। এই নৌকা কোনোভাবে গভীর সাগরে যেতে পারে না। উপকূলের কাছাকাছি সকালে গিয়ে মাছ ধরে দুপুরের পরে কূলে ফিরে আসে। এসব নৌকায় ধরা হয় লইট্যা, ফাইষ্যা, পোপা, ছুরি ইত্যাদি ছোট মাছ। এ নৌকায় কখনই ইলিশসহ সামুদ্রিক বড় মাছ ধরা হয় না।

কিন্তু গভীর সাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আহরণ করছে বিভিন্ন ট্রলিং জাহাজ। এসব ট্রলিং জাল ও বড় ট্রলারের ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে সরকার ২০১৫ সালের ২০ মে আইন করে একটি গেজেট প্রকাশ করে। এই গেজেটের আদেশ মূলত ছোট নৌকার জন্য প্রযোজ্য নয়।

এখন ছোট নৌকার উপর এই আইন কার্যকর করায় টেকনাফের ৫০ হাজার জেলের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অনাহারে ভুগছে নৌকার মালিক ও জেলে পরিবার। অনেক পরিবারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বাংলাদেশকেও স্থবির করে দিয়েছে। অন্যদিকে মাদক চোরাচালান বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার ফলে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনী কর্তৃক টেকনাফে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।

এমতাবস্থায় টেকনাফের মানুষ বর্তমানে যখন অবৈধ পথ পরিহার করে বৈধ পথে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে টেকনাফের এক চতুর্থাংশ মানুষ দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরতে না পারলে তাদের জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

নৌকা মালিকেরা জানান, ইতোমধ্যে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরেও তারা স্মারকলিপি ও আবেদন করেছেন। এমতাবস্থায় ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ আদেশটি ছোট নৌকার ক্ষেত্রে প্রয়োগ না করার জন‌্য অথবা সীমিত আকারে মাছ ধরার অনুমতি দিতে নৌকার মালিকেরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


সুজাউদ্দিন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়