ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কক্সবাজারে উৎকণ্ঠায় লক্ষাধিক জেলে

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কক্সবাজারে উৎকণ্ঠায় লক্ষাধিক জেলে

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধের কারণে দুশ্চিন্তায় কক্সবাজারের দেড় লক্ষাধিক জেলে। এদের মধ‌্যে নিবন্ধিত ৪৮ হাজার জেলে খাদ্য সহায়তার আওতায় এলেও বাকিরা কোনো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। তাদেরকেও এ সহায়তার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে অনিবন্ধিত জেলেদেরও সরকারি সহায়তা দেওয়া হোক। অবশ্য, অনিবন্ধিত জেলেদেরও সহযোগিতার জন্য সরকারের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক।

সাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ। মে মাসের ২০ তারিখ থেকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তাই কক্সবাজার উপকূলে ফিরেছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার। বর্তমানে এসব ট্রলারে বসে অলস সময় পার করছেন জেলেরা। সবারই চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা।

বেশ কয়েকজন জেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কারও কাছে জেলে কার্ড নাই। তাই সরকারি খাদ্য সহায়তাও পাবেন না। আবার যাদের জেলে কার্ড রয়েছে, তারাও নাকি এই সরকারি খাদ্য সহায়তা পান না। তার ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনা পরিস্থিতি।

৬ নম্বর ঘাট এলাকায় নোঙর করা মাছ ধরার ট্রলার‘এফবি আল্লাহ দান’। ট্রলারের মাঝি ইলিয়াছ বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করছি। কিন্তু এখনো জেলে কার্ড হয়নি। যখন জেলে কার্ড করতে গিয়েছিলাম, তখন মেম্বার-চেয়ারম্যানরা বলেছে জেলে কার্ড দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ যারা জেলে না, তারাও জেলে কার্ড পেয়েছে। আর আমরা যারা প্রকৃত জেলে, তারা জেলে কার্ড করতে পারিনি।’

ওই ট্রলারের জেলে শুক্কুর আলী বলেন, ‘গতবছরও কোনো সরকারি খাদ্য সহায়তা পাইনি। এবছরও পাব কি না তা জানি না। এখন খুবই দুশ্চিতায় আছি।’

আরেক জেলে রহিম বলেন, ‘১৬ বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করলেও এখনো কোনো জেলে কার্ড পাইনি। গতবছর বন্ধের সময় সরকারি কোনো খাদ্য সহায়তা পাইনি। আমাদের একেকটি ট্রলারে ১৭ থেকে ২০ জন পর্যন্ত জেলে আছে। কিন্তু এবছরও কোনো সহায়তা পেলাম না।’

আবছার উদ্দিনের মালিকাধীন দুটি ট্রলার টুলুর ঘাট এলাকায় নোঙর করা। আবছার উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুটি ট্রলারে প্রায় ৪০ জন জেলে রয়েছে। এই ট্রলার দুটির কোনো মাঝি কিংবা জেলে সরকারিভাবে ১০ কেজি চাল কিংবা কোনো নগদ অর্থ পেয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তা আসে সেটা তো আমরা সবাই শুনি। তারপরও কেনো এই বন্ধের সময় জেলেরা খাদ্য সহায়তা পায় না?’

কক্সবাজারে দুই লক্ষাধিক জেলে থাকলেও সাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধের এই সময়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পান না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, কক্সবাজারে দুই লক্ষাধিক জেলে রয়েছে। তারমধ্যে নিবন্ধিত জেলে মাত্র ৪৮ হাজার। বাকিরা এখনো নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। বাকি জেলেদেরও নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য বার বার সরকারি দপ্তরগুলোকে তাগাদা দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়নি।

ফলে একদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে করোনাভাইরাস- এই দুই পরিস্থিতি নিয়ে জেলেরা খুব বিপদে রয়েছে। তাই সরকারের কাছে দাবি থাকবে, দ্রুত যাতে অনিবন্ধিত জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় এনে সরকারি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, জেলেদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ছিল। যেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৪৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তাদের খাদ্য সরবরাহটা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এর বাইরেও যে লক্ষাধিক জেলে রয়েছে তারাও যাতে সরকারি খাদ্য সহায়তা পায় তার জন্য সরকারের কাছে চাহিদাপত্র প্রেরণ হবে।

কক্সবাজারের আটটি উপজেলায় ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে ১০ হাজারের অধিক। আর এসব ট্রলারে করে সাগরে মাছ শিকার করে দুই লক্ষাধিক জেলে।


সুজাউদ্দিন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়