ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘রাস্তায় বসে খাই আর জমিতে ধান কাটি’

মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘রাস্তায় বসে খাই আর জমিতে ধান কাটি’

৬৮ হাজার গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে আর প্রান্তরে ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে বহিরাগত শ্রমিকরা মাঠে ধান কাটে আর খাওয়ার সময় গৃহস্থ বাহুকে করে খাবার নিয়ে জমির আইলে বা রাস্তার উপরে বসিয়ে খাবার খাওয়ায়। এমন দৃশ্য চোখে পড়লো দিনাজপুরে হিলির হরিহরপুর পাকা রাস্তায়। ১০ জনের ধানকাটা শ্রমিকদের একটি দল রাস্তায় বসে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন।

এক সময় স্ত্রী তার স্বামীর জন্য, মেয়ে তার বাবার জন্য খাবার নিয়ে ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে থাকতো। ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ মুছে আইলে বসে খাবার খেতো। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে কমই পড়ে। তবে ধান কাটা মৌসুমে শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যে বাহুকে করে খাবার আর পানি সাজিয়ে রাস্তায় এসে তাদের ডাকে গৃহস্থ। রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে সকাল ৬ টা থেকে ধান কাটা শুরু করে শ্রমিকরা। বেলা যত হয় ততই গৃহস্থের জন্য পথ চেয়ে থাকে কখন খাবারের ডাক পড়বে।

কথা হয় গাইবন্ধার জেলার ফুলছরি এলাকা থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক দলের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

সে রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা পেটের দায়ে বউ-বাচ্চাদের রেখে এখানে এসেছি। প্রতি বছর ধান কাটা মৌসুমে আসি। কাজে এসে কি দিয়ে খেলাম, আর কোথায় ঘুমালাম তা দেখার সময় নেই। শুধু মাথায় একটা চিন্তা কাজ করতে হবে, কামাই করে বউ-বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাবো।

শ্রমিক হায়দার আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা এটেকুনা (এখানে) আয়ছি কাম করিবার, বসে থাকি না। গৃহস্থ যা দিয়ে খাবার দেয়, তাই দিয়ে খাই। সকালে আলু ভর্ত্তা ভাত, দুপুরে সব্জি ডাল আর রাতে কোন দিন মাছ-ভাতও হয়। এ্যামার ক্ষেতে কাজ করা খুবই কষ্ট, বড় বড় জোক। আজ সকালে দুই জোক মোর পায়েত নাগিছে (লেগেছে)।

শ্রমিক মিন্টু মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, চারদিন হলো আমরা এখানে ধান কাটতে আসছি। গৃহস্থের সাড়ে সাত বিঘা জমির ধান কাটার চুক্তি নিয়েছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটা, ঢোলায় ও মাড়াই করে গৃহস্থের ঘরে তুলে দিচ্ছি। এই অঞ্চলে ধান কাটা মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। আমরা ১০ জন এক সঙ্গে কাজে আসছি। প্রত্যেকের দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা হাজিরা পরছে।

গৃহস্থ আশরাফ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আমার বড় ক্ষতি করে ফেলেছে। ক’দিনের ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টিতে আমার সাড়ে সাত বিঘা জমির ধান পানিতে তোলিয়ে গেছে। ঝড়ের আগে সবাই ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করে শ্রমিকদের দিয়ে ধান কেটে মাড়াই করেছে। আম্ফানের কারণে ধান পানির নিচে। তাই এখন বিপদে পড়ে ৫৬০০ টাকা প্রতি বিঘায় ধান কাটা মাড়াই করে নিতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এবার বোরো ধান চাষে আমার কোন পর্তা হবে না।


হিলি/ (দিনাজপুর)/মোসলেম উদ্দিন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়