ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ, ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা!

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ, ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা!

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে নিখিল তালুকদার (৩২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে উপজেলার রামশীল বাজারের ব্রিজের পাশে তাকে নির্যাতন করা হয় এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর নিহতের পরিবারকে অর্থ দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে মীমাংসা চেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)শেখ লুৎফর রহমান। তবে ঘটনা তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ওসি শেখ লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নিখিলের মৃত্যুর ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিতে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম খান, মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ও আমিনুল ইসলাম রয়েছেন। রিপোর্ট দেওয়ার পর আসল ঘটনা জানা যাবে।

তিনি জানান, ‘‘টাকার বিনিময়ে মীমাংসা চেষ্টা- এটা পুলিশের পক্ষ থেকে হয়নি। সভায় যে সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন, তারা নিখিলের অবর্তমানে পরিবার চালানোর জন্য টাকার ব্যবস্থা করেছেন।’’

শনিবার (৬ জুন) কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, পৌর মেয়র শেখ কামাল হোসেন, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বালা ও ওসি শেখ লুৎফর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিখিলের পরিবার ও সভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, নিখিলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা; তার স্ত্রী এবং ভাইকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই ঘটনা মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।

নিখিলের ভাই শংকর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমাদের হাতে দুই লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকি তিন লাখ টাকা আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে দেবেন। আমাকে ও বৌদিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন নেতারা।’’

রামশীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোকন বালা বলেন, ‘‘আমি ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম। সভায় সিদ্ধান্ত হয় নিহত নিখিলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং তার স্ত্রী ও ছোট ভাইকে চাকরি দেওয়া হবে। এতে উপজেলার সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র উপস্থিত ছিলেন। আমি লোক মুখে নিখিলের নিহতের ব্যাপারে যে কথা শুনেছি, সেটা যদি সত্য হয়; তাহলে ওই পুলিশের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে আইনের শাসন থাকে না।’’

কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘‘নিখিলের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কেউ দিতে পারেননি। অসহায় পরিবারের দিকে তাকিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার পরিবারের হাতে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন লাখ টাকা কয়েক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে।’’

এ ছাড়া তাদের পরিবারে দুই সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাস মোবাইল ফোনে বলেন, ‘‘সেখানে উপস্থিত সবাই নিখিলের পরিবারটিকে বাঁচানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকার ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার জন্য আমরা বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছি।’’

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সঠিক তদন্ত হবে। মিমাংসার বিষয়টি আমার কাছে কোনো বিষয় নয়। দোষী হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।’’

দুই/তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।

গত মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে রামশীল বাজারের ব্রিজের পাশে নিখিলসহ চারজন তাস খেলছিলেন। ওই সময় কোটালীপাড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক শামীম হাসান সেখানে যান। তখন তারা দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তিনজন পালিয়ে গেলেও নিখিলকে শামীম হাসান ধরে মারপিট এবং হাঁটু দিয়ে পিঠে ও মেরুদণ্ড আঘাত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে নিখিলের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

 

বাদল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়