ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দিতে টাকা আদায়ের অভিযোগ

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ২৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দিতে টাকা আদায়ের অভিযোগ

সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বয়স্ক, বিধবা ও শারীরিক সমস্যা প্রতিবন্ধীদের ভাতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ডাটাবেইজ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতাভোগীরা নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতা সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও প্রতিটি ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যারা দাবীকৃত টাকা দিতে পারছে না তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন টিটুর বিরুদ্ধে।

উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের মোট এক হাজার ছয় জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা কার্ডের চুড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। লোকজন বেশি হওয়ায় ওই সুবিধাভোগীদের টাকা প্রদানের জন্য একটি করে ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যার বেশির ভাগ অ্যাকাউন্ট সোনালী ব্যাংকে খোলা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষি ব্যাংকেও অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুন মঙ্গলবার থেকে চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজারের জনতা বাজার সড়কের ড্রিম লাইন কাউন্টারের ভিতরে ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের চূড়ান্ত তালিকার সুবিধাভোগীদের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার কাজ করছেন চেয়ারম্যানের সহযোগী সাহাব উদ্দিন।

নিজে বসে ব্যাংকের ফরম পূরণ করে দিয়ে জন প্রতি ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। যদিও চেয়ারম্যান বলেছেন প্রতি ফরমে ২০০ টাকা করে নেওয়ার জন্য। তবে যারা টাকা কম দিচ্ছেন তাদের অশালিন ভাষায় গালমন্দ করা হচ্ছে। যারা দিতে পারছেন না তাদেরকে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন সাহাব উদ্দিন।

টাকা কেনো নেওয়া হচ্ছে তা জানতে চান হিসাব খুলতে আসা কয়েকজন। তাদেরকে ‘বিভিন্ন খরচ আছে’ বলে জবাব দেন সাহাব উদ্দিন। দিন শেষে এই টাকা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকালে ব্যাংকের হিসাব খোলার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবি ও টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। সাহাব উদ্দিন ও তার সাথে থাকা লোক একজন একজন করে সিরিয়ালে ডেকে কাগজ-পত্র নিয়ে ফরমে স্বাক্ষর ও টিপ নিয়ে টাকা নিয়ে যান।

বিধবা ভাতার কার্ডের হিসাব খোলার জন্য এসে হাতে টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘টাকা-ত দন লাইগবো। ওই এগিন হাডাইবো যে হিয়ার লাই। টিয়া কিল্লাই নের হেতারা জানে বাবু। আমরা কি জানি নি? কাগজ-হত্র রেডি কইত্তে লাইগবো কইছে।’

বিধবা ভাতার ব্যাংক হিসাব করা ১নং ওয়ার্ড হানু মিয়ার ট্যাক এলাকার এক নারী বলেন, ‘৩৮০ টাকা নিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে সাহাব উদ্দিন ফরম দেয়নি। পরে বাজারের একজন থেকে ১২০ টাকা ধার করে মোট ৫০০ টাকা মিলিয়ে দেওয়ার পর ফরম পূরণ করে দিয়েছে।’

ফরম পূরণে ৫০০ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানের সহযোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘অত-টাকাতো নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকে সবার অ্যাকাউন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০টির বেশি অ্যাকাউন্ট ব্যাংক করতে পারবে না। তাই আমরা ফরমগুলো নিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে করে দিচ্ছি। ফরম পূরণ করার পর কেউে একশ’ কেউ দুইশ’ টাকা করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ দিচ্ছেও না। ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যাংককে ১০ টাকা দিতে হয়। চেয়ারম্যান অ্যাকাউন্টগুলো করতে আমাকে সহযোগিতা করতে বলেছেন।’

এদিকে চাপরাশিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন টিটু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাহাব উদ্দিন আমার দলের কোনো কর্মী না। ব্যাংকের ফরম পূরণ করার কোনো দায়িত্বও সাহাব উদ্দিনকে দেওয়া হয়নি। সে ড্রিম লাইন কাউন্টারে কাজ করে। ফরম পূরণে সাহাব উদ্দিন যদি কোনো টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে ফরম পূরণে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ড্রিম লাইন কাউন্টারে সাহাব উদ্দিনের ফরম পূরণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ফরম পূরণের কাজ করা হবে। আমি নিজে বসে থেকে নিজের খরচে ব্যবস্থা করব।’

কবিরহাট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভাতা ভোগীদের সংখ্যা এক হাজার ছয় জন হওয়ায় ব্যাংক হিসাব খুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ফরম পূরণ করতে কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ফরম পূরণে টাকা লেনদেন করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কবিরহাট থানার ওসি (তদন্ত) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। ওসি স্যার ছুটিতে রয়েছে। উনার কাছে অভিযোগ এসেছে কি না আমি জানি না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



নোয়াখালী/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়