ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হিমাগার না থাকায় নষ্ট হচ্ছে আনারস

সাইফুল্লাহ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৬ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
হিমাগার না থাকায় নষ্ট হচ্ছে আনারস

মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি টিলাজুড়ে আনারসের ব্যাপক আবাদ হয়েছে

আনারস একটি সুস্বাদু ও রসালো ফল। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি টিলাজুড়ে এ ফলের ব্যাপক আবাদ হয়। এরমধ্যে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলেও কমতি নেই। টিলার বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা উপকারী ফলটির খ্যাতি রয়েছে জেলার বাইরেও।

প্রতিবছরই স্থানীয় চাষিরা আনারস বিক্রি করে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করে থাকেন। স্বাভাবিক সময়ে আনারসগুলো জেলার বাইরে গেলেও করোনার কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় এ বছর বাইরের লোকজন এ জেলার আনারসের স্বাদ তেমন একটা নিতে পারেননি।

যে কারণে ফলন ভালো হলেও চাহিদা না থাকায় কম দামেই আনারস বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। আর এ অবস্থায় তারা শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি তাদের দীর্ঘদিনের।

সরেজমিন শ্রীমঙ্গলের মোহাজেরাবাদ এলাকায় দেখা যায়, উঁচু-নিচু টিলার মধ্যে আনারস গাছের সারি। সকাল হতেই বাগানে ছুটে যান চাষিরা। শুরু করেন  আনারস সংগ্রহ। দুপুরের আগেই শ্রীমঙ্গলের আড়তে পৌঁছাতে হয় আনারস। বাগান থেকে তোলা আনারস কেউ ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে আবার কেউ জিপে করে বাজারের পানে ছোটেন। যা মৌসুমে প্রতিদিনের চিত্র।

শ্রীমঙ্গলের আড়ৎ ব্যবসায়ী উদয় বাণিজ্যালয়ের মালিক আরিফ আহমদ রাইজিংবিডিকে বলেন, এবার আনারসের ফলন ভালো হলেও ব্যবসায়ীরা বিপদে আছি। দেশে লকডাউনের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আনারস কিনতে আসেননি। ফলে অনেক ফল আমাদের নষ্ট হয়েছে। বাধ্য হয়ে কম দামে খুচরা বিক্রি করতে হয়েছে।
 


তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি শ্রীমঙ্গলে একটি  হিমাগার স্থাপনের। যাতে আনারস বা অন্যন্য মৌসুমি ফল সংরক্ষণ করে রাখা যাবে । সংরক্ষণ না করতে পারায় প্রতি বছরের মতো এবারও বেশ লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের।

মোহাজেরাবাদের আনারস চাষি সেলিম মিয়া। তিনি সাত একর জমিতে আনারস চাষ করেছেন। এবছর তার খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আনারস বিক্রি করে এবার তিনি আয় করেছেন ৯ লাখ টাকা। তার বাগানে কাজ করেছেন ১০ জন লোক। বাগানে ক্যালেন্ডার ও বিলাতী এ দুই ধরনের আনারসের চাষাবাদ করেছেন তিনি।

সেলিম মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা একশ আনারস বিক্রি করি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।  এখানকার উৎপাদিত আনারস বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলা সদর ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে পাঠাচ্ছি।  করোনাভাইরাসের কারণে অন্য কোনো জেলায় আনারস পাঠানো যাচ্ছে না।  সে কারণে আমাদের কিছু আনারস এবার নষ্ট হয়েছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় ১২০১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে।  এছাড়াও শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর, কুলাউড়ায় ৫৫ হেক্টর, রাজনগরে ৪০ হেক্টর , বড়লেখায় ৩২ হেক্টর, জুড়ীতে ৮৮ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে।

জেলায় আনারসের উৎপাদন হয়েছে মোট ২০ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমলগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন। শ্রীমঙ্গলে ৭ হাজার ১৫৮, কুলাউড়ায় ৯৬২, রাজনগরে ৬৭০, বড়লেখায় ৫১২, জুড়ীতে ১৫৪০ ও সদর উপজেলায় ৫৫৯ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুর বারী রাইজিংবিডিকে বলেন, জেলায় গতবারের চেয়ে আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। আনারস দ্রুত পচে যায়। যে কারণে স্থানীয়ভাবে হিমাগার না থাকায় চাষিদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।  শ্রীমঙ্গলে যদি কোল্ড স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে ওঠতো, তাহলে ব্যবসায়ী এবং চাষিদের সুবিধা হতো।  বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।  কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে।


এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়