সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৪০
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা হয়।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
ধীরে ধীরে তা পুরো এসএস রোডে ছড়িয়ে পড়ে। টানা দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এতে পর্যায়ক্রমে উভয় গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ৮টা পর্যন্তও শহরের দুটি পয়েন্টে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বলেন, ‘‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিহত এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভা চলছিল। প্রায় দুই শতাধিক লোকজন মিছিল নিয়ে স্মরণ সভাস্থলে এসে হামলা চালায় ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা।
‘আমরা প্রতিরোধ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২০/২৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।”
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বলেন, ‘প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাই। সেখানে পৌঁছলে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রতিহত করতে গেলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকসহ অন্তত ১৫/২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
স্মরণ সভায় উপস্থিতি থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য বলেন, ‘এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল চলছিল। সেখানে জেলার সভাপতিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় দুই আড়াইশো’ লোকজন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে হামলা চালায়। যে কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি মোবাইলে বলেন, ‘আমি বাসায় আছি। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে বলে শুনেছি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত স্মরণ সভা চলাকালে একাংশের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার সময় তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ক্রমশ তা শহরের মেছুয়া বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন টহল জোরদার করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বিকেলে জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়ের মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ।
ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে নয় দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৫ জুলাই) সকালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় বিজয়ের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর গত ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
নিহত এনামুল হক বিজয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।
অদিত্য রাসেল/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন