গাজীপুরে চুরির অপবাদে নির্যাতনের ১৪ দিন পর যুবকের মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের শিকার আহত মো. ইসরাফিল (২৪) নামে এক যুবক মারা গেছেন। ১৪ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ইসরাফিলকে হাত-পা বেঁধে শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করে কামরুল হাসান লিটন (৪৫) নামে বিএনপির এক নেতা। এরপর থেকে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। 

ওসি বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পূর্বের দেওয়া লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। 

নিহত মো. ইসরাফিল উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসিরের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। অন্যদিকে, অভিযুক্ত মো. কামরুল হাসান লিটন উপজেলার শৈলাট গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ভুক্তভোগী রাজমিস্ত্রিকে বসতবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এরপর শৈলাট মেডিক্যাল মোড় স্কুলমাঠে নিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়। 

এরপর অভিযুক্তরা কোমরের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয়। তাতে পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী রাজমিস্ত্রি বাবা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে তাঁর কাছ থেকে বিএনপির নেতা জোরপূর্বক নন জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর নিয়ে তাঁর কাছে গুরুতর আহত ছেলেকে তুলে দেয়। এ বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা। 

ভুক্তভোগীর বাবা মো. নাসির বলেন, আমার ছেলে সারা দিন রাজমিস্ত্রি কাজ করেন। বাসায় সারা রাত ঘুমিয়ে থেকে সকালে ওঠার পরপর অভিযুক্তরা এসে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে স্কুল মাঠে নির্যাতন করে। এমন অমানবিক নির্যাতনের বিচার চায়। এ বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মারধরের ঘটনায় ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আমার ছেলে মারা গেছেন। 

রাজমিস্ত্রি মৃত্যুর পর থেকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা কামরুল হাসান লিটন পলাতক রয়েছেন। তবে মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, আমি কাউকে মারধর বা নির্যাতন করিনি। 

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোস্তাক আহমেদ জানান, ইসরাফিল নামের একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত করা হবে।