আগস্টে অব্যাহতি, কলেজে ফিরে মামলার মুখে অধ্যক্ষ
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামীপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে। কয়েকজন শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তখন তাকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে, হাইকোর্টে ওই আদেশ স্থগিত হওয়ার দাবি করে কলেজে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ড. গোলাম মাওলা। তিনি বলছেন, হাইকোর্ট তার অব্যাহতির আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। কেন ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন। যেহেতু, অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করা হয়েছে, তাই তিনিই অধ্যক্ষ।
যদিও ড. গোলাম মাওলা অবৈধভাবে চেয়ারে বসেছেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে তার বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পরিচালনা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। গত আগস্টে ড. গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেন আরএমপির তৎকালীন কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। তবে, অব্যাহতি দেওয়ার আগে তাকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান ড. গোলাম মাওলা। অবৈধভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি রিট করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার হাইকোর্ট বেঞ্চ ড. গোলাম মাওলাকে অব্যাহতি দেওয়ার ওই আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান, কেন ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না? আরএমপি কমিশনার ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ওই আদেশের পর সোমবার ড. গোলাম মাওলা তার অনুসারী প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে কলেজে যান। সঙ্গে নিয়ে যান হাইকোর্টের আদেশের কপি। এ সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম কচি কক্ষে তালা দিয়ে রাখেন। পুলিশ কমিশনারের অনুমতি ছাড়া তিনি চাবি দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। চাবি না পেয়ে এ সময় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা শাবল ও হাতুড়ি এনে অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে ফেলেন। এরপর ড. গোলাম মাওলাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসানো হয়। এ সময় তাকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের আটক করার চেষ্টা করে।
কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের ছিনিয়ে নেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কাউকে আটক না করেই কলেজ থেকে চলে যায়। পুলিশ বলছে, ড. গোলাম মাওলা অবৈধভাবে চেয়ারে বসেছেন। আর অধ্যক্ষের দাবি, তার কাছে হাইকোর্টের আদেশ আছে।
আরএমপির বর্তমান কমিশনার ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এ প্রতিবেদকের কাছে কিছু ছবি পাঠান। এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন ড. গোলাম মাওলা। এসব ছবি তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতেই পোস্ট করেছিলেন। আরএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, এসব কারণেই ছাত্র-জনতা তাকে কলেজে রাখতে দেয়নি।
আরএমপি কমিশনার বলেন, “হাইকোর্ট শুধু একটা রুল জারি করেছেন যে, কেন অব্যাহতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে না? হাইকোর্ট আমাকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন জবাব দিতে। এই সময়ের মধ্যে আমরা জবাব দেব। কিন্তু, ড. গোলাম মাওলা বহিরাগতদের নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেছেন।”
তিনি বলেন, “শুধু তা-ই নয়, তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন। এজন্য আমরা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ মামলা করছেন।”
অন্যদিকে, ড. গোলাম মাওলা দাবি করেছেন, হাইকোর্ট যেহেতু অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন, সেহেতু তিনিই অধ্যক্ষ। এজন্যই তিনি কলেজে গেছেন। এখন মামলা হলে তিনি আইনিভাবেই মোকাবিলা করবেন।
তিনি বলেন, “আমাকে কলেজে বসতে না দিয়ে আদালত অবমাননার মতো ঘটনা ঘটেছে। আমিও বিষয়টি আদালতের নজরে আনব।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক