ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হাকিমপুরে অর্ধেকের বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ

হালিম আল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৬ মার্চ ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাকিমপুরে অর্ধেকের বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ

পোলট্রি খামার

উপজেলা প্রতিবেদক

হিলি, ১৬ মার্চ : দফায় দফায় মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুরের হাকিমপুরে গত দুই বছরে অর্ধেকেরও বেশি পোলট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে সবচেয়ে বেশি খামার বন্ধ হয়েছে চলতি বছর। বাকি খামারগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ফলে উপজেলার অধিকাংশ খামারি চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

উপজেলার মধ্য বাসুদেবপুর এলাকার খামারি ছলেকা বেগম রাইজিংবিডিকে জানান, একটি মুরগির বাচ্চা ফার্মে ৩৫ দিন ধরে রাখতে তাদের খাওয়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১৯২ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে বাচ্চা ৩৫ টাকা, ওষুধে ১৫, খাবার ১৪০ ও বিদ্যুৎ ২ টাকা। ৩৫ দিন পর ওই মুরগির ওজন হয় ১ কেজি ৭০০ গ্রাম।

বর্তমানে এসব মুরগি পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার পেছনে মাসে খরচ হয় ১৭৫-১৮০ টাকা। এর আগে খরচ হতো ১৩৫-১৪০ টাকা। এক মাসে মুরগির সর্বোচ্চ ওজন হয় ১ কেজি ৩০০ গ্রাম।

বর্তমানে খামারিরা পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকা বিক্রি করছেন, যা একজন পোলট্রি খামারির জন্য হতাশাজনক। এতে প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।

পালপাড়া এলাকার খামারি ওয়াহেদুর রহমান রিপন রাইজিংবিডিকে বলেন, খামারিদের অনেকেরই নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসা করার মতো পুঁজি নেই। তাই প্রায় সব খামারিই বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার ও ফিড ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধ ক্রয় করছেন। বাকিতে ক্রয় করার কারণে ১ হাজার বাচ্চার খাবার, ওষুধ ইত্যাদি বাবদ অতিরিক্ত ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ অবস্থায় ব্যবসা করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাহিলি বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী লাল চাঁদ রাইজিংবিডিকে জানান, এখন ১০০টি ডিমের একটি খাঁচা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭০০ টাকায়। খুচরা বাজারে এর দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভোক্তাদের কাছে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

খামারিরা জানান, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে ডিমপ্রতি খামারির লাভ থাকে ৪০-৫০ পয়সা। কিন্তু, খামারির পরিশ্রম, শেড নির্মাণ, বাকিতে বাচ্চা ও খাদ্য ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত প্রদত্ত অর্থ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাইয়ের আক্রমণে মুরগির মৃত্যুর বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যে কারণে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন হাকিমপুরের পোলট্রি খামারিরা।

তবে বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো গেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, হাকিমপুরে পোলট্রি মুরগির খামারের সংখ্যা ১২০টি। এদের মধ্যে রেজিস্টারভুক্ত খামারের সংখ্যা ৮০টি। গত দুই বছরে লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে ৬০-৬৫টি খামার। বর্তমানে চালু ৫০-৬০টি। সবচেয়ে বেশি খামার বন্ধ হয়েছে চলতি বছর। খামারগুলো থেকে প্রতিবছর মাংস ও ডিম উৎপাদন হয় ২০-২৫ কোটি টাকার।

স্থানীয় পোলট্রি খামার ও ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবমতে, উপজেলায় ১২৫টি খামারের মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৭৫টি। বাকি খামারগুলোও চলছে কোনোরকমে।

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তা ননীগোপাল বর্মণ রাইজিংবিডিকে জানান, দেশের সম্ভাবনাময় এ খাতটি বর্তমানে সংকটকাল অতিক্রম করছে।

তিনি আরো বলেন, খামারিদের চিকিৎসাসেবা, কারিগরি সহযোগিতাসহ যাবতীয় সহযোগিতা অত্র অফিস থেকে প্রদান করা হয়। তবে স্থানীয় খামারিরা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণসুবিধা পান না।

 

রাইজিংবিডি/হালিম আল/ফেরদৌসী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়