ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অ্যাপোক্যালিপ্টো: একটি ইতিহাসের পুনর্জন্ম

মশিউর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অ্যাপোক্যালিপ্টো: একটি ইতিহাসের পুনর্জন্ম

মশিউর রহমান: মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক মেল গিবসন পরিচালিত অ্যাপোক্যালিপ্টো একটি ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র, যা ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পায়। ছবিটির গল্প ও সুনিপুণ অভিনয়ের উপর ভিত্তি করে একই বছর একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। অ্যাপোক্যালিপ্টোর পটভূমি তৈরি করা হয়েছে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে।

পুরো মুভিটা জঙ্গলে বসবাসকারী কয়েকদল উপজাতিদের নিয়ে, যেখানে মায়া সভ্যতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। মুভিতে প্রথম দলে ফ্লিন্ট স্কাই (Flint Sky) আর তার ছেলে জাগুয়ার পাও (Jaguar Paw) দলের নেতৃত্বে থাকে। একবার অন্য আরেকদল তাদের গ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার অনুমতি চায় এই বলে যে তাদের অঞ্চলে আক্রমণ করা হয়েছে, এখন তারা নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চায়। কিন্তু তাদের চেহারায় থাকে ভীতসন্ত্রস্ত ভাব। দ্বিতীয় দল তাদের গ্রাম অতিক্রম করে যাওয়ার পর ফ্লিন্ট স্কাই তার ছেলে জাগুয়ার পাওকে বলে এই দলের মধ্যে তুমি কী দেখতে পেলে? জাগুয়ার পাও তার বাবার কথার অর্থ বুঝতে পারে না। তখন তার বাবা বলেন, এরা শুধু ভীতই নয়, ভয় দ্বারা সংক্রমিত। আর যখনি কেউ ভয়কে আলিঙ্গন করে তখন সেটা হামাগুড়ি দিয়ে তার বুকে চড়ে বসে, আর তার সুখ কেড়ে নেয়।

ফ্লিন্ট স্কাই তার ছেলেকে আরো বলেছিলেন, মনে রেখো আমি তোমাকে ভয়ের সাথে বেঁচে থাকার জন্য বড় করিনি। এই ভয়কে জয় করতে হবে, একে কখনো আমাদের গ্রামে আসতে দিয়ো না।

ঘটনাক্রমে তাদের গ্রামে তৃতীয় কোনো দল হামলা করে। কেনো করে? তাদের উদ্দেশ্য কী? হামলার পর তাদের নিয়ে করেই বা কী? এই পুরো ব্যাপারটা এতটাই থ্রিল যে শুধু দেখতেই থাকবেন, চোখ সরাতে পারবেন না। এদিকে আক্রমণ করার পর যাওয়ার পথে রোগাক্রান্ত এক বাচ্চা মেয়ে সামনে আসে, আর তৃতীয় দলের একজন তাকে বাজেভাবে তাড়িয়ে দেয়। তখন মেয়েটা অভিশাপ দেয়/ভবিষ্যৎ বাণী করে যে তাদের মৃত্যু সন্নিকটে। তাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনের জন্য তৈরি হতে বলে। তাদের মৃত্যু কার হাতে হবে, তাও মেয়েটি বলে দেয়। তাদের মৃত্যুর সময় আর মৃত্যুদানকারী ব্যক্তির বর্ণনা দিয়ে বলে, তাকে তোমরা পৃথিবী আর মৃত্তিকার মধ্য হতে জাগ্রত হতে দেখবে, তখন দিন হবে রাতের মত।

মুভিতে একটা বড় গর্তের ভেতরে জাগুয়ার তার এক ছেলে আর গর্ভবতী স্ত্রীকে লুকিয়ে রাখে আর তাদের সেখানে বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলোও অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশেষ করে পানির মধ্যে যখন জাগুয়ার স্ত্রী বাচ্চা প্রসব করে।

জাগুয়ার পাও ও তার সঙ্গীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি গ্রামে, যেখানে তাদেরকে গলা কেটে হত্যা করা হবে। তবে সূর্যের এক অলৌকিক ইশারায় তাদের কয়েকজনকে সেখানে হত্যা না করে বড় একটি মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়, যেখানে তাদেরকে পালিয়ে যেতে বললেও পেছন থেকে তীর-ধনুকের আঘাতে মেরে ফেলা হবে। জাগুয়ার পাও ব্যাপারটি বুঝতে পেরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং তার নিজের গ্রামের জঙ্গলে প্রবেশ করে। জাগুয়ার পাও শত্রুদের চ্যালেঞ্জ করে বলে 'জঙ্গলটি তার গ্রামের, আর এই জঙ্গলেই সে ছোট থেকে বড় হয়েছে, পারলে এখানে তাকে হত্যা করে দেখানো হোক'। জঙ্গলেই সে বিভিন্ন কৌশলে শত্রুদের হত্যা করে, আর পুরো দৃশ্যটি অসাধারণভাবে মুভিতে দেখানো হয়েছে।

এই মুভি সমালোচকদের দ্বারা অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে, যদিও কিছু ব্যক্তিদের মতে মুভির পরিচালক মেল গিবসন মায়া সভ্যতাকে আরেকটু নম্রভাবে দেখালেও পারতেন। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রুডি ইয়াংব্লাড (Rudy Youngblood).

আর বলতেই হবে মুভির ক্যামেরা ম্যান ছিল এক কথায় অসাধারণ। এই মুভি দেখার পর কেমন যেন একটা শিহরণ অনুভব করেছিলাম, যেটা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী ছিল।
মুভিটা এক কথায় ইতিহাসের সাক্ষী, আপনি চাইলেই ইউটিউবে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।

ছবিটির পরিচালক ছিলেন হলিউডের শ্রেষ্ঠ নির্মাতাদের একজন মেল গিবসন এবং প্রযোজনার কাজ তিনিই করেছেন। তার সহযোগী প্রযোজক ছিলেন ফারহাদ সাফিনিয়া এবং ব্রুস ডেভি। রচনা করেন মেল গিবসন এবং ফারহাদ সাফিনিয়া। মায়া ভাষায় নির্মিত এই অসাধারণ ছবি মুক্তি পেয়েছে ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। নির্মাণব্যয় ছিল ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পর্যালোচক: শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

রাইজিংবিডি/খুবি/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মশিউর রহমান/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়