ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সফলতার প্রথম সোপান বই

সিয়াম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সফলতার প্রথম সোপান বই

প্রযুক্তির এক অপার কল্যাণময় সময়ে বসবাস করছি আমরা। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমাদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। আমাদের চিন্তা চেতনা সবকিছু আটকে গেছে চারকোনা স্মার্ট বাক্সে। ফলে আমাদের মানসিক বিকাশ ও আত্মোন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে স্মার্টফোন এবং ফেসবুকে অযথা সময় অপচয় না করে বই পড়ার মাধ্যমে জীবনযুদ্ধে নিজেকে আরো একধাপ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই কার্যকরী সমাধান।

আমরা কেন বই পড়ব? কেনই বা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে অন্যের লেখা বই কিনব? উত্তরটা বিস্তৃত এবং সুদৃঢ়। মানব সভ্যতার এক শ্বাশত ও চির কল্যাণময় উপাদান হচ্ছে বই। একটি বইয়ের প্রভাব এতই ব্যাপক যে, একটি ভালো বই একজন অজ্ঞ বর্বরকেও মানবিক গুণসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে।

বই পড়ার অসংখ্য ভালো দিক রয়েছে। মানুষ যখন কোনো বই পড়ে, তখন তার গল্প বা কাহিনীর প্রেক্ষাপটে এমন ভাবে ঢুকে পরে যে, তার কাছে মনে হয় বইয়ে বলা ঘটনাগুলো যেন তার সামনেই ঘটছে। বই পড়তে পড়তে কাহিনীর প্রেক্ষিতে মানুষের মস্তিষ্ক উত্তেজিত ও শিথিল হয়। এভাবে মস্তিষ্ক চারপাশের প্রতিদিনের মানসিক চাপ থেকে অনেকাংশে মুক্তি লাভ করে।

বিজ্ঞানীরা হার্টবিট এবং মাসল টেনশনের মনিটরিং করে দেখেছেন, ছয় মিনিট বই পড়লে স্ট্রেস লেভেল ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস Dementia এবং Alzheimer’s নামক দুটি মানসিক রোগ প্রতিরোধে অনেকাংশেই সক্ষম।

পৃথিবীতে যত সফল ব্যক্তি রয়েছেন। আমরা যাদেরকে নিজেদের জীবনের আইডল মনে করি, তাদের সকলের মধ্যে একটি ব্যাপার খুব কমন ছিল। সেটি হচ্ছে বই পড়া। আপনি কি জানেন, ওয়ারেন বাফেট তার পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা বই পড়তেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস প্রতিবছর ৫০টি বই শেষ করতেন। তারা সফল হওয়ার পরও তাদের এই বই পড়ার অভ্যাস অব্যাহত রেখেছেন।

বই পড়ার সবচেয়ে বড় ও মুখ্য উপকারিতাটি হচ্ছে জ্ঞান অর্জন। নিত্য নতুন বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জানার পরিধিকে আরো বৃদ্ধি করতে পারি। দেশি-বিদেশি লেখকদের নানান বই পড়ে আমরা নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, স্বাধীনতার পাশাপাশি বিজাতিদের সাহিত্য সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। ফলে আমাদের চিন্তা, চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটবে এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

বই পড়ার মাধ্যমে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। একজন পাঠক যখন বই পড়ে তখন তার স্মৃতি ভাণ্ডারে অসংখ্য নতুন শব্দ যোগ হয়। ফলে সে সঠিক ভাবে মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে এবং নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এছাড়াও বই পড়ার সময় গল্পের খাতিরে আমাদেরকে অনেকগুলো চরিত্র এবং তাদের ব্যাপারে খুঁটিনাটি তথ্য মাথায় রাখতে হয়। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ভাণ্ডারকে ব্যবহার করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

নতুন নতুন বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। আমরা স্মার্ট বাক্সের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে শিখি। ফলে নতুন কিছু আবিষ্কারের পথ সুগম হয়। বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি করে। মানসিক দুর্বলতা দূর করে আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ অজানাকে জানতে পারে, মানুষের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি সৃষ্টি হয়।

তবে একটি ভাল বই যেমন মানুষের জীবনকে সাজিয়ে দিতে পারে, তেমনি একটি মন্দ বই মানুষের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তাই সব সময় ভাল বই পড়তে হবে।

কবি ওমর খৈয়াম যথার্থই বলেছেন, ‘রুটি, মদ ফুরিয়ে যাবে; প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, কিন্তু একখানা বই অনন্ত যৌবনা। যদি তেমন বই হয়।’ সর্বোপরি মানবিক গুণসম্পন্ন, নৈতিক, চরিত্রবান মানুষ হওয়ার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ (১ম বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ঢাবি/সিয়াম আহমেদ/হাকিম মাহি  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়