ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভালোবাসার অপর নাম মুফতি স‌্যার

ওমর সানি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ১৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসার অপর নাম মুফতি স‌্যার

পিতামাতা হলো সন্তানের প্রথম শিক্ষক। তাঁদের পর যিনি একটি সন্তানকে যোগ্য করে তুলেন, তিনি হলেন পরম শ্রদ্ধার শিক্ষক। তিনিই সমাজকে পরিবর্তন করে গতিশীল করেন। আমার পরম সৌভাগ্য আমি এমন একজন শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছি। তাঁর নাম মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন মুফতি। তিনি চালিতাবুনিয়া মমতাজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন ।

প্রাথমিকের গণ্ডি শেষ করে ভর্তি হলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম দিনেই তার চলন-বলন এবং ব‌্যবহার সবই আমাকে আকৃষ্ট করে। দিনে দিনে তার প্রতি আমার বিশ্বাস আরো মজবুত হতে থাকে। যতই দিন যেতে থাকে ততই তাঁকে আরো ভাল লাকতে থাকে। আজও মনে পড়ে, তাঁর সুন্দর ব্যবহার সকল ছাত্র-ছাত্রীকে মুগ্ধ করে রাখত।

যখন নবম শ্রেণিতে উঠলাম, তখন তিনি আমাদের অর্থনীতি পড়াতেন। অর্থনীতি যে একটা মজার বিষয়, তা তাঁর কাছেই শিখেছি। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। কিন্তু তার পরও আমার মনে হতো, তিনি আমাকে একটু বেশি স্নেহ করেন।

যখন চারদিকে ইতিহাস বিকৃতির চর্চা চলছিল, তখন তিনি আমাদের বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসটির কথাই শিখিয়েছেন। স্কুল, কলেজ পেরিয়ে আজ ব্যস্ততম কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর প্রতিটা কথা আমার চলার পথের আদর্শ হিসেবে কাজ করে।

স‌্যারের পুরো নাম মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন মুফতি হলেও সবার কাছে বাহাদুর মুফতি স্যার হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদেহী মানুষটি শুধু উচ্চ শিক্ষিতই নয়, তিনি ব্যক্তি জীবনে একজন সৎ ও চরিত্রবান মানুষ। সকলের মঙ্গল কামনা করাই তার ব্রত।

তিনি একজন সংগ্রামী মানুষ। অন্যায়কে অন্যায় বলতে কখনো ভয় করেন না। সততার সাথে তার জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মাঠে তিনি একজন তুখোড় বক্তা। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন দিবস পালনে তাঁর বক্তৃতা আজও কানে বাজে।

এই প্রতিভাবান মানুষটি ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে অনার্স এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে সম্মানের সাথে শিক্ষকতা করে আসছেন।

২০১৪ সালে হার্টের বাইপাস অপারেশন করিয়েছেন, কিন্তু তাঁকে দেখলে মনেই হবে না যে, তিনি এত বড় একটা অপারেশন করিয়েছেন। এখনো তিনি সেই হাসি-খুশিতে ভরা একজন মানুষ।

মুফতি স‌্যারের শিক্ষানুরাগী বাবা একাধারে ২৬ বছর চালিতাবুনিয়া মমতাজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। স্যারের বাবার জন্য আজ আমি (বি, এ) পাশ পর্যন্ত পড়তে সক্ষম হয়েছি। তাঁর অনুপ্রেরণায় আমার বাবা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে লেখা পড়া করিয়েছেন। আমি তার দেহের আত্মার শান্তি কামনা করছি। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও স্যার একজন অহংকারহীন মানুষ।

২০২০ সালের ২১ অক্টোবর বিদ‌্যালয়ে স‌্যারের শেষ কর্মদিবস। ঐ দিন চালিতাবুনিয়া মমতাজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হারাবে একজন আদর্শ শিক্ষাগুরুকে। কিন্তু তাঁর আদর্শ সবার মাঝে প্রতিফলিত হোক সেই কামনা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, গলাচিপা সরকারি কলেজ, পটুয়াখালী।

 

পটুয়াখালী/ওমর সানি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়